শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে অর্থের প্রবাহ বাড়ানো প্রয়োজন। এতে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। বৈষম্য কমানো যাবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির পথ হবে মসৃণ। জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে আরও অর্থবহ। এ প্রক্রিয়ার বড় হাতিয়ার হতে পারে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস)। তবে এমএফএস বা মোবাইল ব্যাংকিং এখনও অনিয়ন্ত্রিত পথেই চলছে। এর অনেক ঝুঁকিও আছে।

গতকাল মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি :উপযোগিতা এবং অনুশীলন’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন অর্থনীতিবিদরা। ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এবং পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে। রাজধানীর ইআরএফ কার্যালয়ে এ আয়োজন করা হয়।

এতে বক্তব্য দেন পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দেবদুলাল রায়, পিআরআইর গবেষণা পরিচালক ড. আব্দুর রাজ্জাক ও পরিচালক ড. বজলুল এইচ খন্দকার। ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে কর্মশালা পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম।

কর্মশালায় ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশের বড় একটি জনগোষ্ঠী এখনও আর্থিক খাতের সেবা থেকে বঞ্চিত। আবার ব্যাংকিং সেবাও সীমিত। তবে এজেন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের একটি নতুন ধারা শুরু হয়েছে। করোনাকালে এর ব্যবহার অনেক সুবিধা দিয়েছে। নানা বিতর্ক সত্ত্বেও কাজ করছে ই-কমার্স।

তিনি বলেন, গ্রামে লাখ লাখ কুটির শিল্প আছে। তাদের মধ্যে অর্থপ্রবাহ এবং লেনদেনের সুযোগ বাড়ানো দরকার। শহর থেকে গ্রামে টাকা নেওয়া প্রয়োজন। এখানে ব্যাংকিং সেবাটা অনেক বেশি জরুরি। গ্রামে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছালে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১১০ শতাংশ সুদে ঋণ নিতে হবে না গ্রামের মানুষকে। প্রতিযোগিতা তৈরি হলে ক্ষুদ্র ঋণে ২৪ শতাংশ আদায়ও বন্ধ হবে। ৯ শতাংশ হারেই ঋণ দেওয়া সম্ভব হবে।

তার মতে, মোবাইল ব্যাংকিং এখনও অনিয়ন্ত্রিত পথে চলছে। স্বচ্ছতার অভাব আছে। প্রতিযোগিতা চলছে অসম। এ খাতের জন্য নীতিসহায়তায় দুর্বলতা আছে। অনেক ঝুঁকিও আছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রণ এবং নীতিসমর্থন প্রয়োজন।

দেবদুলাল রায় বলেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ৫০ লাখ মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। শেষ পর্যন্ত কয়েক লাখ মানুষকে এ সেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, তাদের কোনো ধরনের ব্যাংক হিসাব নেই।

সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিবিষয়ক প্রবন্ধে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকারের এ কর্মসূচির মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বড় সুযোগ ছিল। তবে সুবিধাভোগী নির্বাচন ও ডাটা সিস্টেমের দুর্বলতা এবং অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকাসহ নানা কারণে সফলভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হয়নি। এখনও ৫২ শতাংশ মানুষ ব্যাংকিং সেবার বাইরে রয়ে গেছে। যেখানে এর বৈশ্বিক গড় মাত্র ৩ শতাংশ।

ড. বজলুল এইচ খন্দকার বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির দিক থেকে বাংলাদেশ এখনও অনেক পিছিয়ে। গ্লোবাল মাইক্রো ফিন্যান্স রিপোর্টের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্কোর ৪২, যেখানে ভারতের স্কোর ৭৩। তানজানিয়া, কেনিয়া, পাকিস্তানের মতো দেশের স্কোরও বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি।

গ্রামাঞ্চলে অর্থপ্রবাহ বাড়ানো প্রয়োজন

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *