ঢাকা, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ (বাসস) : ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের কমার্সিয়াল কাউন্সিলার (ফরেন কমার্সিয়াল সার্ভিস) জন ফে বলেছেন, বাংলাদেশী পণ্যের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারমূলক বাজার (জিএসপি) সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। তাই এই মুহূর্তে জিএসপি সুবিধা ফেরত পাওয়া সহজ নয়। তবে এর বিকল্প হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশী পণ্যের উপর শুল্ক কমানো যায় কিনা-সেই পর্যালোচনা করা যেতে পারে।
সোমবার অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি একথা বলেন। ঢাকায় সংগঠনটির নিজস্ব কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ও বিনিয়োগ’ বিষয়ক এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের (বিটিএমই) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, বিকেএমইএ সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান, গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ, শাশা ডেনিমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ, ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ  মীরধা প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ ড. এম এ রাজ্জাক।
জন ফে বলেন, জিএসপি পুনর্বহাল করতে হলে মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন লাগে।এই মুহূর্তে সেটি বাংলাদেশের জন্য উত্তম পন্থা নয়। বরং বাংলাদেশী পণ্যের উপর শুল্ক কমানো যায় কিনা-সেই পর্যালোচনা করা যেতে পারে। সেটি হলে বাংলাদেশের রপ্তানি অনেক বৃদ্ধি পাবে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ফোরামের (টিকফা) বৈঠকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৈঠকে এ বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শ্রম সুরক্ষা, আইনের সংস্কারসহ যুক্তরাষ্ট্রের নির্দিষ্ট একটি রোডম্যাপ আছে। বাংলাদেশ বৈঠকে জানিয়েছে এসব ক্ষেত্রে তারা উন্নতি করেছে।

তিনি আরও বলেন, শুল্ক বিদ্যমান থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য চমৎকার একটি বাজার। সেখানে বাংলাদেশী পোশাকের রপ্তানি বাড়ানোর আরও সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এই কূটনীতিক বলেন, দু’দেশের বাণিজ্য সীমিত সংখ্যক পণ্যের মধ্যে আটকে আছে। স্বাস্থ্যসেবা, আইটি, শিক্ষা, জ¦ালানি, কৃষিখাতে দু’দেশের ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে কাজ করতে পারে এবং এসব খাতে মার্কিন বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা অনেক। তবে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের জন্য জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল এবং বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের আহবান জানান।

সেমিনারে মূল্য প্রবন্ধে অর্থনীতিবিদ ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশ যে পোশাক রপ্তানি করে,তার বড় অংশ সুতা দিয়ে তৈরি। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর অন্যতম সুতা রপ্তানিকারক। কিন্তু বাংলাদেশ তার ব্যবহৃত সুতার মাত্র ৫ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করে থাকে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় সুতা আমদানি করার পর ওই সুতা দিয়ে তৈরি পোশাক পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত সুবিধায় রপ্তানি করা গেলে আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি ৩ বিলিয়ন ডলার বেড়ে যাবে। একইসাথে সেদেশে বাংলাদেশী পোশাক রপ্তানি ৪০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এভাবে উভয় দেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ কাজে লাগাতে পারে।

বাংলাদেশী পণ্যের উপর শুল্ক কমানোর ব্যাপারে আলোচনা হতে পারে : মার্কিন কমার্সিয়াল কাউন্সিলার

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *