বিগত দোসরা মে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লকডাউন এক্সিট পলিসি নিয়ে আমাদের নিবন্ধটি (“খুলে দেয়া, নাকি এখনো নয়? লকডাউন এক্সিট পরিকল্পনা প্রয়োজন”) প্রকাশিত হওয়ার পরবর্তী সময়টুকুতে সমাজে এবং অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ সংক্রমনের প্রভাব আরো অনেক দৃশ্যমান হয়েছে। সারা বিশ্বজুড়েই সমাজ এবং অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব পড়েছে। এসময়ে সরকার এবং সমাজ যখন মহামারীজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, তখন সরকারকে সেবা প্রদানে নিরবচ্ছিন্নতাকে অগ্রাধিকার দেয়ায় মনোযোগ দিতে হবে, বিশেষ করে স্বাস্হ্য এবং আর্থিক খাতে, এবং কৌশলগত দিকপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ক্রমহ্রাসমান সীমিত সম্পদকে সমাজের সর্বাধিক কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশের মতো দেশে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হলো সেই সব highly vulnerable মানুষের কাছে ন্যুনতম sustenance পৌঁছে দেয়া, তা সে খাদ্য সহায়তা হোক আর সরাসরি অর্থসাহায্যই হোক, যাদের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে, দৈনিক মজুরীভিত্তিক কাজ তথা কাজের অন্যান্য সুযোগ কমে যাওয়ার সাথে সাথে, এবং অনেক ক্ষেত্রেই জমানো টাকা শেষ হয়ে গেছে।

আংশিক খুলে দেয়া, সিদ্ধান্তের দ্ব্যর্থবোধকতা, এবং অ-সরল রৈখিক প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ সরকার মহামারীর সংক্রমনরোধে বা কমিয়ে রাখার জন্য বিভিন্নভাবে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। সংক্রমন ও মৃত্যুর সংখ্যা অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় এখনো কম হলেও দৃশ্যমানভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।কিন্তু, এই ক্রান্তিকালীন সময়ে, কলকারখানা এবং দোকানপাট, মার্কেট এবং অন্যান্য সামাজিক মিলনস্হলগুলো খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তে নেয়া হয়েছে, যদিও বেশ কঠিন শর্তাবলী পালনসাপেক্ষে। আন্ত:জেলা সাধারণ পরিবহন এখনো বন্ধ রয়েছে, তবে পণ্য পরিবহন বাড়ছে। মাঠে কৃষিকাজ চলছে। খাদ্য ও অপরাপর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য খাত, সেইসাথে ঔষধশিল্পখাত প্রথম থেকেই খোলা রয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে কিছু কিছু ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খোলার চিন্তা ভাবনা করছে। বাস্তবতার নিরিখে, সরকারের আরোপিত শর্তগুলোর পালন করাও যেমন সহজ হবে না, সেগুলো বলবৎ করা বা নজরদারি করাও কষ্টকর হবে; ফলে, হয় খোলার জন্য চিহ্নিত কিছু খাত খুলবে না (যেমন, সারাদেশে অনেক বড় বড় মার্কেটই ঈদের আগে না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে), আর যারা খুলবে তারা এই শর্তাবলী পরিপালন না করার কারণে স্বাস্হ্যসংকটটি বাড়বে। ব্যাংক খোলার সময় কমিয়ে আনার এবং স্বল্পসংখ্যক শাখা খোলা থাকার কারণে অনেক শাখাতেই প্রচন্ড ভীড় দেখা যাচ্ছে। গত সপ্তাহে আগের সপ্তাহগুলোর মতো সামাজিক দূরত্ব ততটুকু ভালোভাবেও বজায় রাখা যায়নি।

এই সিদ্ধান্তগুলো কিসের ভিত্তিতে নেয়া হয়েছে, বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাদের অনুরোধে-উপরোধে, তা পরিস্কার নয়। তার পরও, কিছুটা স্বেচ্ছাপ্রনোদিত, কিছুটা সরকার-আরোপিত লকডাউন এখনো কতক বজায় রয়েছে। “সাধারণ ছুটি” ৩০শে মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এটা মোটামুটি সর্বজনস্বীকৃত যে প্রথমদিকের লকডাউন আমাদেরকে অনেকাংশেই আরো বেশী সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করেছে। তবে এটা একেবারে পরিস্কার যে কোভিড-১৯ সহসাই একদিন উধাও হয়ে যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না কোন ভ্যাক্সিন বা কার্যকর চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়। Herd immunity কেনা যাবে বহু জীবনের মূল্যে, যা আমাদের কাছে মোটেও গ্রহনযোগ্য নয়। আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থাপনার সক্ষমতাও প্রশ্নের সম্মুখীন। যদিও এখনো খুব একটা বোঝা যাচ্ছে না যে একটা মোটামুটি সাধারণ অবস্থায় ফিরে যেতে কতদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে, তবুও একটা সামগ্রিক কর্মসূচি ও সমাধানের রূপরেখা তৈরী করার সময় এসে গেছে, যেগুলোকে দেশের জন্য প্রয়োজনানুযায়ী বিস্তারিত অথচ পরিবর্তনশীল ‘কোভিড -১৯ লকডাউন এক্জিট স্ট্র্যাটেজির’ আওতায় কার্যকর ও ফলপ্রসুভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে; এবং যার প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হবে সুস্বাস্থ্য ও সামাজিক কল্যান, সেই সাথে অর্থনীতিতে পুন:প্রাণসণ্চালন। বাংলাদেশের মত দেশ অপরিজ্ঞেয় সময়কালের জন্য নিজেকে বন্ধ করে রাখতে পারে না।

স্থানীয় বাস্তবতার ভিত্তিতে সামগ্রিক কর্মসূচির কাঠামো প্রণয়ন
প্রথমেই একেবারে পরিস্কার হওয়া উচিত যে কোন দেশই এমন কোন নিখুঁত সমাধান খুঁজে পায়নি যা যেকোন বা সব দেশেই ব্যবহারযোগ্য। প্রতিটি দেশের নিজস্বতাকে হিসাবে নিতে হবে। যেমন, বাংলাদেশের জনবসতির ঘনত্ব, পরবর্তি মাসগুলোর আবহাওয়া, এবং অর্থনৈতিক বাস্তবতা অন্য প্রয় সব, এমনকি আশেপাশের দেশের থেকে ভিন্ন হবে, অতএব যেকোন কৌশল নিরূপন করার সময় এগুলো এবং অন্য আরো অনেক বিষয় মাথায় রেখে করতে হবে। তদুপরি সংবাদমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে যে যে দেশগুলো লকডাউন শিথিল করেছে, সেগুলোতে আবার সংক্রমন স্বল্পসময়েই বাড়ছে।

এই নিবন্ধে, অন্যত্র সফল হয়েছে, বা ঝুঁকি এবং সম্ভাব্য সাফল্য গুরুত্ব্রের সাথে পর্যালোচনা করে ব্যবহার করা হচ্ছে, বা আদৌ তেমন সফল হয়নি, এরকম কার্যক্রমগুলোকে দেখে, একটি লকডাউন এক্জিট স্ট্র্যাটেজি রূপায়নে কি কি বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, সেগুলোকে চিহ্নিত করার একটা চেষ্টা করা হয়েছে। এটা বিশেষভাবে বাংলাদেশের জন্য অভিযোজিত নয়, তবে যেখানে যথাযথ মনে হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের তথ্য উল্লেখিত হয়েছে।

যেকোন লকডাউন এক্সিট স্ট্র্যাটেজি তৈরী করতে গেলে লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসার অন্তত এই তিনটি পর্যায় বিবেচনা করতে হবে:

(১) প্রস্তুতি – লকডাউনের বাধানিষেধগুলো তুলে ফেরার আগে স্বাস্হ্য ও অন্যান্য সম্পৃক্ত খাতগুলোর প্রস্তুতি কোন পর্যায়ে থাকতে হবে?

(২) সূত্রপাত – দেশের জন্য কার্যকর একটি এক্জিটের জন্য কোন কোন কাজের সূত্রপাত করতে হবে?

(৩) বাস্তবায়ন – লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসার সময় কোন পথনির্দেশ এবং কৌশল অবলম্বন করা উচিত?

লকডাউন এক্সিট স্ট্র্যাটেজি নিম্নোক্ত পাঁচটি মূল বিষয় মাথায় রেখে তৈরী করা যায়, যেমন স্বাস্থ্যব্যবস্থা, জীবিকা, অর্থনীতির পুনঃসঞ্চালন, যাতায়াতের বা চলাচলের স্বাধীনতা, এবং সুশাসন (governance)। স্বাস্থ্যব্যবস্থায় মূলত: কোভিড-১৯ সংক্রমনের বিস্তার নিয়ন্ত্রনে রাখা; পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক ও সহায়তাকারী, অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি ও উপকরণের ব্যবস্থা করার দিকে নজর দিতে হবে। এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের, কোভিড-১৯ সংক্রমনের সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের এবং পরীক্ষা করা প্রয়োজন এমন ব্যক্তিদের ব্যাপারে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার চিত্র দেখা যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, বহু ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ আক্রান্ত নয় অথচ অন্য রোগে আক্রান্ত অসুস্থ ব্যক্তিও চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না।

জীবিকার ক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্য হবে জীবিকার প্রাপ্যতা ও জীবিকার্জনের ক্ষেত্র, সেই সাথে সামাজিক নিরাপত্তা ও অভিবাসী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। যদিও কয়েকটি শিল্প ও অন্য খাত সম্পুর্ণ বা আংশিক বন্ধ হয়নি – ফলে তাদের কর্মিদের আয়ে সহায়তা করেছে, অন্য অনেকেই কাজ এবং পারিশ্রমিক, দুটোতেই কাটছাঁট করেছে। বেশীর ভাগ শিল্প ও অন্যান্য খাত, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং সেবাখাতগুলো যাদের বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই অনিয়মিত বা informal খাতের, এমনভাবে চলতে পারেনি যাতে তাদের উপার্জন নিশ্চিত হয়; যে কারনে জীবিকার বিষয়টি নিয়ে তুমুল তর্কবিতর্ক হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছে; এবং ১১ই মে তারিখের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ৬৪ টি জেলার প্রশাসন প্রায় এক কোটি পরিবারের মাঝে ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৮০২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করেছে। সারা দেশের জন, এপর্যন্ত চাল বরাদ্দ করা হয়েছে ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ৬৭ মেট্রিক টন। এছাড়া, ৩ কোটি ৬ লক্ষ ২ হাজার মানুষকে ৫১ কোটি ৬৯ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে, যাতে ৫৯ লক্ষ ১১ হাজার ৫০০ পরিবার উপকৃত হবে। অর্থসহায়তার জন্য বর্তমানে মোট বরাদ্দ ৮০ কোটি টাকা। শিশুদের জন্য খাদ্যসহায়তাসহ আরো কিছু সরাসরি বরাদ্দ ও সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে এবং হবে। এন জি ও এবং বেসরকারী বা ব্যক্তিখাতের অনেক প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে এসেছে, তবে বেশীর ভাগই খাদ্যসহায়তা নিয়ে। এই সংক্রমনের ব্যপ্তি এবং সময়কালের অনিশ্চয়তার জন্য এটা অনুমান করা দুষ্কর যে কতদূর পর্যন্ত এই সহায়তা অব্যহত রাখতে হবে, এবং তা কতখানি কার্যকর হবে।

শিল্প এবং সেবাখাতের ক্ষেত্রে আমাদের সরকার বিভিন্নভাবে প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকার, অর্থাৎ জিডিপির প্রায় ৩%, আর্থিক সহায়তা নিজে দিচ্ছে বা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে, তা বেতনের জন্য ঋণের সুদে ভর্তুকি দিয়ে হোক, চলতি মূলধন সহায়তা বা অন্যান্য মন্জুরি বা ঋণের মাধ্যমে। কিন্তু একথা বলতেই হবে যে এই সহায়তাগুলো পাওয়ার প্রক্রিয়া যথেষ্ট জটিল, এবং নীতিনির্ধারকরা তা স্বীকারও করেন। সহায়তার সিংহভাগের জন্য ক্রেডিট রিস্ক ব্যাংকগুলোর ঘাড়েই পড়বে, যাদেরকে ব্যাংক-ক্লায়েন্ট সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ বিতরণ করতে বলা হয়েছে; আর যেখানে অন্তত কুটিরশিল্প, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র শিল্পের ক্ষেত্রে এরকম ব্যাংক-ক্লায়েন্ট সম্পর্ক বাস্তবে খুব কমই আছে। এই পদক্ষেপগুলো স্বল্পমেয়াদে ক্ষতি সামাল দেয়ার প্রচেষ্টা; তাই সহসাই অর্থনীতিতে প্রাণসন্চার করার জন মধ্যম এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিরূপন করতে হবে। নীচে এব্যাপারে আরো বক্তব্য রইল।

অভিবাসী কর্মী সংক্রান্ত বিষয়টির দুটি দিক রয়েছে। একটি, কর্মিদের দেশের ভিতরে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কর্মস্থলে যাতায়াতের ব্যাপার। অন্য, এবং আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হলো বিদেশ থেকে ফিরে আসা আমাদের অভিবাসী কর্মীরা, যাদের সহসা তাদের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম, তাদের ব্যবস্থাপনা।

কোভিড-১৯ সংক্রমনের সময় এবং অব্যবহিত পরে যে মুখ্য একটি বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে তা হলো অর্থনীতিতে পুনরায় গতিসঞ্চার করা। পৃথিবীতে এমন একটিও অর্থনীতি থাকবে বলে মনে হয়না যার উপর এই মহামারীর গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব পরবে না। অর্থনীতিতে পুনরায় গতিসন্চার করতে হলে যে কোনো দেশকে অর্থনীতির অত্যাবশ্যক এবং গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে যেমন কৃষি, উৎপাদনশিল্প, রপ্তানি, এবং গুরুত্বপূর্ণ সেবাখাতগুলোকে জাগিয়ে তোলার জন্য কার্যকর নীতিনির্ধারন করতে হবে। ব্যবসা সবসময় যেমন হয় তেমনি হবে, এই পূর্বানুমানের ভিত্তিতে গতানুগতিক বাজেট বানানো কাজে দেবে না। অর্থনীতিতে তারল্যসঞ্চালন করে চাহিদাবৃদ্ধি করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে, একই সাথে ব্যবসা নতুন করে চালু করার জন্য সরবরাহের দিকে নজর দিতে হবে, যাতে অন্যানের মধ্যে তাৎক্ষণিক কর্মহানি ও ব্যবসায়িক ক্ষতি যতদূর সম্ভব কমানো যায়। মহামারীর সন্নিহিত সময় বা অব্যবহিত পরে শুধু নয়, আগামী দুই-তিন বছর অর্থনীতির বৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রেমিটেন্স কমে যাবে, রপ্তানি হ্রাস পেতে পারে, স্থানীয় চাহিদায় মন্দা দেখা যাবে।

যাতায়াত বা চলাচলের স্বাধীনতা অর্থে মানুষ, পণ্য ও সেবার চলাচল পুনরায় চালু করা, অবশ্যই স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে যথাযথ মনোযোগ দিয়ে। বাংলাদেশে পণ্য এবং মানুষের চলাচল শুরু হয়ে দিয়েছে; এখন দেখার বিষয় স্বলপমেয়াদে এর ফলাফল কি হয়। মানুষ এবং পণ্যের চলাচল প্রযুক্তির মাধ্যমে মানচিত্রায়ন বা ম্যাপিং করে, তার সাথে কোভিড-১৯ সংক্রমনের আপেক্ষিকতা নির্ণয় করা যায়; এবং এর ব্যবহার করে চলাচল ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য ও জীবন বিপন্ন না হয়, তথ্যভিত্তিক এমন প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তে নেয়া যায়।

আর্থিক পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ব্যবস্থা, আইনশৃংখলা প্রয়োগ, পানি-গ্যাস-বিদ্যুৎ ইত্যাদি জন-উপযোগ, সরবরাহব্যবস্থা, ইত্যাদির জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ব্যবস্থাপনার জন্য অধিকমাত্রায় সুশাসন ও নজরদারী প্রয়োজন। সর্বনিম্ন সময়ে যত ভালো করে সম্ভব এর কাঠামো সাজিয়ে ফেলতে হবে। যেমন, আমাদের দেশে স্বাস্থ্যখাতের অবকাঠামো এবং ব্যবস্থাপনার যে চিত্র উঠে এসেছে, তা মোটেও আস্থার উদ্রেক করে না; অন্যদিকে আইনশৃংক্ষলারক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনী গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রশাসন ও জনসাধারণকে সহায়তা করতে বিরামহীনভাবে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করেছে। প্রশাসনিক ক্লান্তিও (administrative fatigue) একটা বিষয় যা বিবেচনায় রাখতে হবে। আর্থিক পরিকল্পনা করার সময় অংশিজনদের মতামত নেয়া একান্ত প্রয়োজন, যে কোনো আর্থিক বা অনার্থিক সহায়তাকে সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছানো ও কার্যকর করার জন্য

লকডাউন এক্সিট স্ট্র্যাটেজিতে অবশ্যবিবেচ্য বিষয়সমূহ
উপরে যে পাঁচটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ বিবৃত হলো, তার আলোকে যে কোন আদর্শ লকডাউন এক্সিট স্ট্র্যাটেজিতে নিম্নবর্ণিত মৌলিক বিষয়গুলি বিধৃত থাকবে:

(১) লকডাউন এক্সিট স্ট্র্যাটেজির উদ্দেশ্য ও চ্যালেন্জসমূহ।

(২) কেন্দ্রীয়ভাবে বর্তমান পরিস্হিতির মুল্যায়ন ও নিরীক্ষণ, যা লকডাউন এক্জিট স্ট্র্যাটেজি বাস্তবায়নকালে চলমান থাকবে।

(৩) প্রস্তুতি মুল্যায়নের জন্য একটি পরিকাঠামো (framework) নির্ধারণ করা, যার মাধ্যমে অংশিজনদের প্রতিটি গোষ্ঠির জন্য তাদের নির্ধারিত কাজ বাস্তবায়নের প্রস্তুতি মুল্যায়ন করা যায়।

(৪) একটি পরিকাঠামো তৈরী করা, স্বাস্হ্য, সামাজিক, অর্থনৈতিক, আর্থিক ও অন্যান্য পরিপ্রেক্ষিতে ঝুঁকি মানচিত্রায়ন ও ব্যবস্হাপনা করার জন্য।

(৫) পর্যায়ক্রমিকভাবে লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসার খাতওয়ারি কৌশল নির্ধারনের জন্য বিবেচ্য বিষয় পর্যালোচনা, যেমন সংক্রমনের পর্যায়, তীব্রতা, ও ব্যাপকতার, ভৌগলিক এলাকাভিত্তিক বিষয়, প্রতিটি এলাকার জনসাধারণ-সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট বিষয়াদি, উল্লিখিত খাতের লজিস্টিক্স, এবং এরকম অন্যান্য বিষয়।

এই নিবন্ধে আমারা চেষ্টা করেছি সরকারের বিবেচনার জন্য কিছুটা বিস্তৃত কাঠমোতে লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসার পরিকল্পনার একটা অবয়ব তুলে ধরতে। সরকার সার্বিক পরিকাঠামো স্থির করে বাস্তবায়নের জন্য চুড়ান্ত করলে, পরবর্তিতে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগসমূহ সব অংশিজনদের সাথে পরামর্শক্রমে প্রতিটি অংশের বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে।

সরকার কর্তৃক গঠিত, সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞ সম্বলিত, একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রতিপাদ্য বিষয়গুলো চিহ্নিত করবে।

(১) লকডাউন এক্সিট স্ট্র্যাটেজির উদ্দেশ্য ও চ্যালেন্জসমূহ:
(ক) লকডাউন এক্সিট স্ট্র্যাটেজি বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্জিতব্য মূল লক্ষ্য সমূহ (স্বাস্থ্য ও অন্যান্য)। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রধানত জনসাধারণের সর্বাধিক-সম্ভব সুস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সাপেক্ষে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড নিরাপদে ও পর্যায়ক্রমে খুলে দেয়াটাই হবে এর আদর্শ লক্ষ্য।

(খ) উদ্দেশ্য পূরণে সরকার কি কি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেন্জের সম্মুখীন হতে পারে, তা চিহ্নিত করা। এই চ্যালেন্জগুলো হতে পারে সুশাসন নিশ্চিত করার মেকানিজমের অভাব বা দূর্বলতা, সক্ষমতা ও প্রশিক্ষণ, যথেষ্ট সংখ্যায় প্রয়োজনীয় মানবসম্পদের প্রাপ্যতা, প্রযুক্তির অভাব, আর্থিক ও অন্যান্য সম্পদের অভাব, এবং সর্বোপরি, ইচ্ছাশক্তির অভাব।

(২) কেন্দ্রীয়ভাবে পরিস্হিতির মুল্যায়ন ও নিরীক্ষণের পরিকাঠামো (framework):
(ক) কোভিড-১৯ জনিত লকডাউন থেকে নির্গমন-সম্পর্কিত উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন।

(খ) উক্ত কমিটির গঠন, ও সদস্যদের যোগ্যতা ও কার্যপরিধি নির্ধারণ।

(গ) কমিটির পর্যাপ্ত লজিস্টিক্স ও সহায়ক জনবল নিশ্চিত করা, যাতে তারা প্রয়োজনীয় সব তথ্যাদি প্রাপ্ত হয় এবং অংশিজনদের সাথে স্বচ্ছ ও কার্যকরভাবে দ্বিপাক্ষিক মতামত আদানপ্রদান করতে পারে।

(ঘ) কমিটি কর্তৃক লকডাউন এক্জিট স্ট্র্যাটেজি বাস্তবায়ন নিরীক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশক পরিকাঠামো প্রদান।

(ঙ) ডিজিটাল ও প্রযুক্তিভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম তৈরী করা, যেমন কোভিড-১৯ ব্যবস্হাপনার জন্য জাতীয় পোর্টাল, বা যার মাধ্যমে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং ও অন্যান্য স্বাস্হ্য-সম্পর্কিত কার্য সম্পাদন, এমনকি আর্থিক ও অপরাপর সহায়তা যথাস্হানে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্হা করা যেতে পারে। সরকারের a2i প্রকল্প ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল টুল্স ও প্ল্যাটফর্ম তৈরী বা সোর্স করছে, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, ব্যবস্হাপনা, এবং লজিস্টিক্স সমন্বয়ের জন্য। বাংলাদেশে এই খাতে অত্যন্ত প্রতিভাবান ও দক্ষ জনশক্তি রয়েছে যাদ্রকে এই প্রয়াসে সংযুক্ত করলে ভালো ফল আশা করা যায়।

(৩) প্রস্তুতি মূল্যায়ন পরিকাঠামো:
(ক) গুরুত্বপূর্ণ খাতে সাংগঠনিক সক্ষমতা ও অবকাঠামো প্রাপ্যতা সংক্রান্ত প্রস্তুতি মূল্যায়নের জন্য খসড়া পরিকাঠামো তৈরী। দুটি আবশ্যিকসহ খাত হলো স্বাস্হ্য ও আর্থিক খাত। আরো হতে পারে পরিবহন এবং আইনশৃংখলা খাত।

(খ) প্রশাসনিক এককসমূহে (যেমন বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে) সাংগঠনিক সক্ষমতা ও সংক্রান্ত প্রস্তুতি মূল্যায়নের জন্য খসড়া পরিকাঠামো তৈরী।

(৪) স্বাস্থ্য, সামাজিক, অর্থনৈতিক, আর্থিক ও অন্যান্য পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকরভাবে ঝুঁকি মানচিত্রায়ন ও ব্যবস্হাপনা করার জন্য একটি পরিকাঠামো তৈরী করা:
(ক) বিভিন্ন প্রশাসনিক স্তরে, এবং বিভিন্ন খাত ও অর্থনৈতিক স্তরে সংক্রমনের প্রবনতা ও গতিপ্রকৃতি নির্ণয়ের জন্য যথাসম্ভব তথ্যপ্রমাণভিত্তিক নির্দেশক (indicative) খসড়া পরিকাঠামো তৈরী।

(খ) জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্হ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি শ্রেণীকরণ ও মানচিত্রায়নের জন্য সূচক (indicator) নির্ধারণ।

(গ) কোভিড-১৯ হটস্পট এবং ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠির ব্যবস্হাপনা ও সংক্রমন নিয়ন্ত্রিত (containment) এলাকা নিরীক্ষণে প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য পরিকাঠামো তৈরী।

(ঘ) লকডাউন থেকে নির্গমনের পর্যায়ক্রম এবং লকডাউনের পর্যায় নির্ণয়ের মানদন্ড স্হিরিকরণ।

(৫) পর্যায়ক্রমিকভাবে লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসার খাতওয়ারি কৌশল নির্ধারনের জন্য বিবেচ্য বিষয় পর্যালোচনা – অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে:
(ক) স্বাস্থ্যব্যবস্থা
(১) ট্রেসিং ও পরীক্ষা
(২) সংক্রমন নিয়ন্ত্রন (transmission control)
(৩) কোভিড-১৯ রোগীদের ব্যবস্হাপনা পদ্ধতি
(৪) স্বাস্থ্যখাতের অবকাঠামো, পিপিই, ঔষধ ও ভ্যাক্সিন (প্রাপ্যতা সাপেক্ষে) ব্যবস্থাপনা
(৫) নিরীক্ষনের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার
(৬) ভারচুয়াল স্বাস্থ্যপরিচর্যা প্রশিক্ষণ
(৭) কোভিড-১৯ পুন:সংক্রমন প্রস্তুতি

(খ) জীবিকা
(১) জীবিকার্জনে পুনরায় নিয়োজিত হওয়া
(২) কর্মসংস্থান সৃষ্টি
(৩) কর্মস্থলে নিরাপত্তা

(গ) ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠি ব্যবস্থাপনা
(১) শিশু, মহিলা, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক মানুষের কল্যান
(২) সর্বনিম্নস্তরের পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা

(ঘ) পণ্য ও সেবা
(১) সরবরাহ ব্যবস্থাপনা
(২) মার্কেট ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া

(ঙ) সুশাসন
(১) সক্ষমতা-বৃদ্ধির জন্য আবশ্যক উপকরণ
(২) আইন-শৃংখলা; ভীড় ব্যবস্হাপনা
(৩) উপজেলা ও ইউনিয়ন কাউন্সিলের ক্ষমতায়ন
(৪) পাবলিক ফাইনান্স ব্যবস্হাপনা
(৫) করারোপ ও অর্থনীতির পুনরুত্থান
(৬) কোভিড-১৯ ইনস্যুরেন্স পলিসি ও ইমপ্যাক্ট ফান্ড

(চ) চলাচল
(১) দেশের অভ্যন্তরে মানুষ ও পণ্য চলাচলের স্বাচ্ছন্দ
(২) দেশের বাইরে থেকে মানুষ ও পণ্য চলাচলের স্বাচ্ছন্দ
(৩) গণপরিবহন ব্যবস্থা

(ছ) পানি-গ্যাস-বিদ্যুৎ ইত্যাদি জন-উপযোগ
(১) ন্যুনতম জন-উপযোগ, যেমন পানি ও পয়:নিষ্কাশন
(২) শহর এবং গ্রামাঞ্চলে জন-উপযোগ

(জ)যোগাযোগ
(১) তথ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগ (Information Education and Communication (IEC)) ব্যবস্থা, সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য বিতরণের জন্য।
(২) অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা

(ঝ) কৃষি
(১) কৃষি খাতে কাজের ধারাবাহিকতা
(২) সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে সমন্বয়সাধন
(৩) ভর্তুকি এবং আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ

(ঞ) শিক্ষা
(১) প্রযুক্তির ব্যবহার
(২) বিলম্বিত শিক্ষা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা

(ট) অভিবাসী জনগোষ্ঠি ব্যবস্থাপনা
(১) অভিবাসী জনগোষ্ঠি ব্যবস্থাপনা ও কল্যাণ, দেশের অভ্যন্তরে নিজ জেলায় প্রত্যাবর্তনকালে
(২) অভিবাসী জনগোষ্ঠি ব্যবস্থাপনা ও কল্যাণ, বিদেশ থেকে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনকালে
(৩) অভিবাসীদের শারীরিক অবস্হান নিশ্চিতকরণসহ রোগসংক্রমনের ব্যপ্তি নিয়ন্ত্রন
(৪) কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসন

(ঠ) শিল্প
(১) কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র, ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান (CMSME) পুনরুজ্জীবিতকরণ, বিশেষকের বস্ত্র, খাদ্যপ্রক্রিয়াজাতকরণ ইত্যাদি শিল্পের দিকে লক্ষ্য রেখে
(২) বৃহৎ শিল্প পুনরুজ্জীবিতকরণ
(৩) প্রধানত অভ্যন্তরীন চাহিদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভর্তুকি এবং অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান, আর্থিক এবং অনার্থিক দুইভাবেই

একটি সুচিন্তিত লকডাউন এক্সিট পরিকল্পনার গুরুত্ব কতখানি, তার উপর যথেষ্ট জোর দেয়া সম্ভব নয়, বিশেষ করে যেখানে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড খুলে দেয়ার জরুরি প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে অপরিকল্পিকভাবেই এবং কিছু শর্তাবলী ছাড়া (যেগুলো বাস্তবে সত্যিকার অর্থে সব পালনযোগ্য না) স্বাস্হ্য ও নিরাপত্তার ব্যাপারে অত্যল্প মনোযোগ দিয়ে বিভিন্ন কর্মকান্ড শুরু হয়ে গেছে। যেসব দেশ খুলে দেয়ার কথা চিন্তা করছে, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র সহ, তাদের বেশীরভাগকে এই চিন্তাও করতে হচ্ছে যে যথাসময়ের আগেই সব খুলে দিলে দ্বিতীয়বার আরো মারাত্মকভাবে রোগসংক্রমন ফিরে আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ভইরোলজিস্টদের একজন, ড:ফাউচি গত ১২ই মে সেনেটকে দৃঢ়ভাবে এই সম্ভাবনার কথা নিশ্চিত করেছেন।

বাংলাদেশে সরকার এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে (যেমন, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা প্রকাশ; গণপরিবহন বহুলাংশে বন্ধ রাখা; ঋুঁকিতে থাকা মানুষকে ক্রমবর্ধমান হারে বেঁচে থাকার জন্য সহায়তা দেয়া; মোবাইল ফাইন্যানসিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে সরাসরি ক্যাশ ট্রান্সফার ইত্যাদি) যেগুলোর মধ্যে কয়েকটি লকডাউন এক্জিট স্ট্র্যাটেজির অংশ হিসেবে গণ্য হতে পারে। যেমন, a2i প্রকল্প কৃষি ও খাদ্য সরবরাহের সাথে পরিবহন ও পরিবহন শ্রমিকদের সমন্বয়, সাথে বাজার এবং উৎপাদকের সমন্বয়; দূরশিক্ষণ এবং ঘরে বসে কাজ এসব ক্ষেত্রে প্রযুক্তিভিত্তিক লজিস্টিকস ডিজাইনের কাজ করছে। তারপরও যা নেই সেটা হল সব বা সবচেয়ে লাগসই উপাদানগুলোর সমন্বয়ে তৈরী করা একটি সার্বিক পরিকল্পনা, এবং জনসাধারণের সাথে স্বচ্ছ, সমন্বিত উভয়পাক্ষিক যোগাযোগ। এই নিবন্ধে আমরা, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের এক্জিট স্ট্র্যাটেজির উদাহরণগুলো পর্যালাচনা করে একটা কাঠামো দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছি, যাতে একটা ভালো লকডাউন এক্জিট স্ট্র্যাটেজিতে “কি” এবং “কিভাবে” এই প্রশ্নদুটির কেমন উত্তর থাকা প্রয়োজন, তা অনেকটা সহজে বোঝা যায়। এটা কোনওভাবেই অবশ্য-অনুসরনীয় কোনো প্রেস্ক্রিপশন নয়। চলমান ভিত্তিতে বিবেচনায় আনতে হবে এমন অসংখ্য পরিবর্তনশীল নিয়ামক এবং “অজানা অজানা” (unknown unknowns) বিষয় রয়েছে।

একটি দেশের সরকারই শুধুমাত্র পারে লকডাউন এক্জিট স্ট্র্যাটেজি প্রস্তুত করে সেটাকে বাস্তবায়ন করতে। তবুও, এধরনের পরিকল্পনায় কি কি বিষয় জড়িত থাকে সেব্যাপারে স্বচ্ছতা এবং তথ্য এরকম পদক্ষেপের প্রতি ঐকমত্য সৃষ্টি করে এবং পরিকল্পনা তৈরিতে সাহায্য করে। স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়া সরকারকর্তৃক বিধৃত এরকম যেকোনো স্ট্র্যাটেজির প্রতি সমর্থন ও আস্হার জন্ম দেবে। এই নিবন্ধ সরকার ও জনসাধারনের সামনে এবিষয়ে কিছুটা সহজবোধ্যতা এবং সম্ভাব্য ভালো দৃষ্টান্ত তুলে ধরার প্রয়াসমাত্র, যা এলক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার পদ্ধতিগুলোকে দৃশ্যমান করতে সহায়ক হবে।

প্রবন্ধটি লিখেছেন যারা…..

  • নিহাদ কবির, ব্যারিস্টার, প্রেসিডেন্ট, এমসিসিআই
  • আসিফ ইব্রাহিম, চেয়ারম্যান, চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ
  • আবুল কাশেম খান, চেয়ারম্যান, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)
  • সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, অ্যাডভাইজার, লেদার ফ্যুটওয়্যার অ্যান্ড গুড মেনুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন
  • ড. মাসরুর রিয়াজ, ইকোনমিস্ট অ্যান্ড চেয়ারম্যান, পলিসি এক্সচেঞ্জ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *