corona-crisis

আবু তাহের খান:

করোনাজনিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ইতোমধ্যে বেশকিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তবে গৃহীত এসব ব্যবস্থার বাস্তবায়ন কৌশলের যথার্থতা নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে নানাবিধ প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। তদুপরি প্রশ্ন রয়েছে এসব কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়েও। এ অবস্থায় উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের অর্থনৈতিক করণীয় বিষয়ে খুব স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন মহল থেকে নানা ধরনের প্রস্তাব ও মতামত দেয়া হচ্ছে এবং প্রস্তাবদানের এ ধারা দিনে দিনে আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে। এরমধ্যে বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার আলোকে উত্থাপিত গঠনমূলক প্রস্তাব যেমনি রয়েছে, তেমনি রয়েছে ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে ওঠে আসা ন্যূনতম মানহীন প্রস্তাবও। অন্যদিকে এগুলোর মধ্যে চিন্তার ঐক্য যেমনি রয়েছে, তেমনি আবার রয়েছে ব্যাপক মতদ্বৈততাও। দেখা যাচ্ছে, করোনাজনিত কারণে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যত কঠিন হচ্ছে, এসব প্রস্তাবের রকমফেরও ততোই বদলাচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারের উচিৎ হবে এরইমধ্যে ঘটে যাওয়া ত্রুটিবিচ্যুতিসমূহ মূল্যায়ন করে সার্বিক পরিস্থিতি ও সীমাবদ্ধতার আলোকে কার্যকর কৌশল নিয়ে এগুনো, যাতে সামনের কঠিন পরিস্থিতি যতোটা সম্ভব দ্ক্ষতার সাথে সামাল দেয়া সম্ভব হয়। দ্বিতীয়ত: খেয়াল রাখা যে, আবারও একই ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে।

আলোচনার গোড়াতেই বলে নিতে চাই যে, অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা সংক্রান্ত এ ধরনের আলোচনায় বাংলাদেশের অধিকাংশ নীতিনির্ধারকদের চিন্তায় প্রথমেই ভেসে ওঠে নিজেদের স্বার্থ ও প্রয়োজনের বিষয়টি এবং এর পরপরই আসে তাদের সন্নিকটে থাকা শহুরে বিত্তবান শ্রেণির স্বার্থের প্রসঙ্গটি। কিন্তু এ লেখায় সে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে বস্তুত গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে সাধারণ গ্রামীণ মানুষের প্রতি, যারা স্বার্থের বিচারে অন্যান্য সময়ের মতো এই করোনারকালেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অথচ সংখ্যায় গরিষ্ঠতর। তবে মনে রাখা দরকার যে, গ্রামের সাধারণ মানুষের প্রতি এ গুরুত্বারোপের বিষয়টিতে শহরাঞ্চলের নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষও সমানভাবে উপকৃত হবে।

এবার মূল বিষয়ে আসা যাক এবং সেখানে অবধারিতভাবেই বলা যেতে পারে যে, ২০২০-২১ অর্থবছর শুরু হওয়ার আগেই আরো অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও করোনার কারণে যে ধরনের অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে, সেখানে সবচেয়ে কষ্টের মধ্যে রয়েছে নিম্নআয়শ্রেণির মানুষ। ফলে সরকারের সর্বাগ্র করণীয় হবে আসন্ন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নকালে বিত্তবান বণিক শ্রেণির চাপের কাছে মাথানত না করে তাদের স্বার্থের বলয় থেকে বেরিয়ে এসে নিম্নআয়শ্রেণির সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য তুলনামূলকভাবে একটি ছোট আকৃতির বাজেট প্রণয়নের জন্য এখন থেকেই কাজ শুরু করা। কাজটি মোটেও সহজ নয়। কারণ এ কাজে যাদের স্বার্থ ত্যাগ করার কথা বলা হচ্ছে, এ প্রক্রিয়ার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বস্তুত তাদেরই একচেটিয়া প্রাধান্য। ফলে এ ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ব্যতীত আরতো কোনো উপায় দেখছি না, যদিচ সব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা কোনো দায়িত্বশীল ব্যবস্থার পরিচায়ক নয়।

উল্লিখিত বাজেটের রাজস্ব আহরণের পরিধিতে প্রথমেই ব্যক্তিসংখ্যাকে মূল বিবেচনায় না রেখে সম্পদধারীদের উপর অধিক হারে কর আরোপের নীতি গ্রহণ করা যেতে পারে, যাতে করোনাজনিত কারণে নিম্নবিত্ত মানুষ কাজ হারিয়ে বা তাদের আয় কমে যাওয়ার পরও কোনোরকমে টিকে থাকতে পারে; ২) নিত্যপণ্য ও মুলধনী যন্ত্রপাতি ব্যতীত সকল বিলাসদ্রব্য ও অন্যান্য পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করতে হবে, যাতে তা দিয়ে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পূরণ করা সম্ভব হয়; ৩) সম্ভাব্য রাজস্ব ঘাটতির কথা চিন্তা করে বিভিন্ন খাতভিত্তিক নগদ ভর্তুকির হার ও পরিমাণ দুইই সীমিত রাখতে হবে; ৪) বিদেশ থেকে প্রেরিত রেমিটেন্সের উপর নির্ধারিত হারে দ্রুত নগদ ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে হবে; ৫) বীজ, সার, কীটনাশক ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের উপর যতোটা সম্ভব বর্ধিত হারে ভর্তুকি প্রদান করতে হবে; ৬) পরিচালন সংশ্লিষ্ট রাজস্ব ব্যয় যতোটা সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে এবং রাজস্বখাতের আওতাধীন সকল ব্যয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কৃচ্ছতা সাধন করতে হবে; ৭) সরকারি দফতরে সকল প্রকার আপ্যায়ন, সম্মানী ভাতা, বিদেশ ভ্রমণ, ওভার টাইম ভাতা, যানবাহনের জ্বালানি ইত্যাদি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে; ৮) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-এর আওতায় সকল প্রকার তয়তদবিরের ঊর্ধ্বে ওঠে কম অগ্রাধিকারসম্পন্ন প্রকল্পসমূহ দ্রুত ছাটাই করতে হবে এবং অগ্রাধিকারসম্পন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে; ৯) অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সরঞ্জাম ব্যতীত সরকারি দফতরের অন্য সকল কেনাকাটা বন্ধ রাখতে হবে; এবং ১০) কাবিখা, সামাজিক বনায়ন, দারিদ্র্য ভাতা, বয়স্ক ভাতা, স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিতরণ ইত্যাদি গণমুখী কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

২০০৮-০৯-এর বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কঠিন বৈরী সময়েও বাংলাদেশের উপর-যে তা তেমন একটা আচর কাটতে পারেনি, তার মূল কারণ ছিল কৃষিখাতের অসামান্য অবদান। ধারণা করা যায় যে, আশঙ্কিত আসন্ন বিশ্বমন্দার কালেও এই কৃষিই আবার বাংলাদেশকে তথা এর মানুষ ও অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখবে। কারণ সামনের দিনগুলোতে অবধারিতভাবেই শিল্প ও সেবাখাতে উৎপাদন ও প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে। এরূপ পরিস্থিতিতে কৃষিখাতকে সামনে রেখে গুটিকয়েক প্রস্তাব এখানে তুলে ধরা হলো, যা আমাদের সামনের দুঃসময়ে বাঁচার দিশা যোগাতে পারে।

এক. দেশে এখন বোরো মওসুম চলছে। নানা মহলের সহযোগিতায় ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা অঞ্চলের ফসল কাটার কাজ মোটামুটি সম্পন্ন হলেও অন্যান্য অঞ্চলে এটি এখনো বাকি আছে। ফলে অবশিষ্ট অঞ্চলেও এ কাজটি অনুরূপ ধারায় দ্রুত সম্পন্ন হওয়া উচিৎ বলে মনে করি এবং এটি করোনার নমুনা দ্রুত পরীক্ষা করার মতোই সমান জরুরি। এদিকে কালবৈশাখীও ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আকস্মিক বন্যারও আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এমতাবস্থায়, ফসল আহরণ প্রক্রিয়ায় যাতে ব্যাপক শস্যহানি ঘটে এবং এর সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় যাতে অপচয় রোধ করা যায়, সে লক্ষ্যে এখন থেকেই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। অন্যদিকে, ফসল ওঠার পর পরই অভাবের তাড়নায় যাতে দরিদ্র কৃষককে কম মূল্যে ফসল বিক্রি করে দিতে না হয়, তজ্জন্য তাদের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহের মতো নগদ অর্থ তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় সম্ভব সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে দরিদ্র কৃষকদের তালিকা তৈরি করে নগদ অর্থ বিতরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অপচয় হয়তো কিছু হবে। কিন্তু তারপরও এ দুর্দিনে দরিদ্র কৃষককে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এটি করতেই হবে (এখানে দুর্নীতিকে সমর্থন করা হচ্ছে না)।

দুই. ধানের বোরো মওসুম শেষ হলেও আমনের ও আউশের দুশ্চিন্তা এখনো রয়েই গেছে। তদুপরি গম, যব, ভুট্টা, আখ, আলু, পেয়াজ ইত্যাদি ফসলের আহরণ ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও রয়েছে একই ধরনের সমস্যা। একইভাবে ফলমূল, শাক-সবজি, ফুল ইত্যাদির একটি বড় অংশও যথাযথ সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে প্রতিবছর এভাবে বিনষ্ট হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন কৃষিপণ্য সংরক্ষণের এ সমস্যার বিষয়টি নিয়ে কৃষি বিভাগকে আরো গুরুত্বের সাথে চিন্তাভাবনা করতে হবে। উল্লেখ্য, এ ক্ষেত্রে যথাযথ সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা গেলে বাংলাদেশের কৃষকের ফল, ফুল ও ফসলের উৎপাদন প্রায় ২০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে বলে আশা করা যায়।

তিন. কৃষি সংক্রান্ত আবহাওয়ার এক বছরের আগাম পূর্ভাবাস সংগ্রহের মাধ্যমে সে অনুযায়ী ফসলের বপন, আহরণ ও অন্যান্য সূচি নির্ধারণে কৃষককে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদান করতে পারে কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। একইভাবে কৃষকের দোরগোড়ায় ন্যায্যমূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ পৌঁছে দিতে হবে।এবং সেটি দেয়ার ক্ষেত্রেও এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্ধিত ও উদ্যোগী ভূমিকা দেশের কৃষি উৎপাদনকে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়ে দিতে পারে।

অভিজ্ঞতা বলে, কৃষিখাত সংশ্লিষ্ট উল্লিখিত প্রস্তাবসমূহের ব্যাপারে প্রাথমিক আমলাতান্ত্রিক প্রতিক্রিয়া হয়তো হতে পারে এরূপ যে: এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা কার্যক্রমের অধিকাংশই সরকার ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করে চলেছে। আর বাদবাকিগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদী। ফলে এসবের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সহসা সম্ভব নয়। কিন্তু পাশাপাশি আমরা এটাও জানি যে, গতানুগতিক আমলাতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা ও প্রক্রিয়ার বাইরে যেয়ে কাজ করার মতো বহুসংখ্যক কৃষিগবেষক, কৃষিকর্মকর্তা ও কৃষিকর্মী এ দেশে রয়েছে এবং বস্তুত তাঁদেরই অবদানে বাংলাদেশ আজ উদ্ধৃত্ত ফসলের দেশ। হলফ করে বলতে পারি, এঁদেরকে যথাযাথভাবে উদ্বুদ্ধ করে কাজে লাগানো গেলে এঁদের মাধ্যমে কৃষিখাতই হয়ে ওঠতে পারে করোনাজনিত অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাবার অন্যতম রক্ষাকবচ।

এটাতো এখন খুবই জানা যে, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে রেমিটেন্স ও রফতানি দুই-ই ব্যাপক হারে হ্রাস পাবে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য তথা বৈদেশিক মুদ্রার এ ঘাটতি কিভাবে সামাল দেয়া যাবে? একটি আংশিক উপায় অন্ততঃ এই যে, কৃষিতে উৎপাদন বাড়িয়ে এ খাত থেকে দ্রুত রফতানি বৃদ্ধির চেষ্টা নেয়া যেতে পারে। দ্বিতীয়ত: বিলাসদ্রব্যসহ অপ্রয়োজনীয় ও স্বল্প প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তৃতীয়ত: বৈদেশিক মুদ্রার বিদ্যমান মজুদ ব্যবহারের লক্ষ্যে অবিলম্বে একটি সতর্ক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। চতুর্থত: বিভিন্ন দেশের যেসব প্রতিষ্ঠান এতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে আসছিল, তারা এখন আমদানি বন্ধ বা হ্রাস করে দিলেও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিৎ হবে তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলা এবং পারস্যুয়েসন অব্যাহত রাখা, যাতে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া মাত্র সবচেয়ে আগে কার্যাদেশটি পাওয়া সম্ভব হয়।

আর এ প্রসঙ্গে একটি কথা সম্পূর্ণ আলাদাভাবে বলতে চাই যে, বহুমাত্রিক নানা দূরদর্শী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং সেসবের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন-প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পরও হয়তো সব ক্ষেত্রে সমান সাফল্য আসবে না এবং কিছু কিছু কৌশল হয়তো ভুলও প্রমাণিত হবে। কিন্তু একটি জায়গায় আমাদেরকে কোনোভাবেই ভুল করা যাবে না এবং সেটি হচ্ছে খাদ্য উৎপাদন। কারণ খাদ্য উৎপাদন যদি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানো যায়, তাহলে জনজীবনে আর যত অর্থনৈতিক ভোগান্তিই দেখা দিক না কেন, অন্ততঃ না খেয়ে মরার ঝুঁকি তৈরি হবে না। আর আশঙ্কিত মন্দায় দেশের নিম্নআয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের জন্য এটাই হতে পারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

সব মিলিয়ে একটিই কথা: এটি একটি বিশ্বজনীন দুর্যোগ, যার কোনো পূর্ব-অভিজ্ঞতা আমাদের কারোরই ছিল না। ফলে সেই অভিজ্ঞতাবিহীন পরিবেশে সর্বোচ্চ প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি দিয়ে যথাযথ হিসাব-নিকাশ করে সবচেয়ে বিচক্ষণতার সাথে যে বা যারাই পরিস্থিতিকে মোকাবলা করতে পারবে, আগামীদিনের পৃথিবীতে বস্তুত তারাই ভালোভাবে টিকে থাকবে। দেখা যাক, সে দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার পরীক্ষায় আমরা কতোটা এগিয়ে থাকতে পারি। তবে একটি বিষয় এখানে বলা যেতেই পারে যে, সরকার কর্তৃক এ ক্ষেত্রে যত প্রজ্ঞাশীল ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচিই গ্রহণ করা হোক না কেন, সরকারের চারপাশে নানা চরিত্রের যে স্বার্থান্বেষী মহল সারাক্ষণ জোঁকের মতো আষ্টেপৃষ্টে লেগে আছে, তাদের থাবা থেকে এসব কার্যক্রম ও কর্মসূচিকে মুক্ত রাখতে না পারলে শত চেষ্টাতেও এ ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হবে না। তবে আমরা আশাবাদী যে, জনগণের সর্বাত্মক প্রতিরোধের মুখে ঐ স্বার্থান্বেষী অর্থগৃধ্নুরা পিছু হটতে বাধ্য হবে এবং করোনা-উত্তর পৃথিবীতে বাংলাদেশ এক নতুনতর ন্যায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক সমাজব্যবস্থার পথে এগিয়ে যাবে।

আবু তাহের খান

পরিচালক
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
[email protected]

ক্রেডিট: বণিকবার্তা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *