শুধুমাত্র তামাকজাত দ্রব্য আর সিগারেটের নিকোটিনে প্রতিবছর হাজার হাজার যুবকের অকাল মৃত্যু হয়। এই সংকট নিরসনে সরকারের কঠোর ভূমিকা চেয়ে ‘তামাকবিরোধী জোট’ বলছে, আর কোনো অপমৃত্যু চায় না সংস্থাটি।
মঙ্গলবার (০২ মার্চ) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য দেয় সংস্থাটি। এসময় তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট করারোপ জরুরি বলেও এক গবেষণা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।
ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন দ্য ইউনিয়নের কারিগরী পরামর্শক সৈয়দ মাহবুবুল আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক। সভাটি সঞ্চালনা করেন ইকোনোমিক রিপোর্টারস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।
রুমানা হক তার প্রবন্ধে বলেন, ২০০৯ সালে ১৫ বছরের উর্ধে ৪৩ শতাংশ থেকে ২০১৭ সালে ৩৫ শতাংশ মানুষ তামাক ব্যবহার করছে। সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমানো সম্ভব হয়েছে। এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। তামাক কোম্পানিগুলো তামাকের প্রসার ও তাদের গ্রাহক বাড়তে তরুণের তামাক ব্যবহারে আগ্রহ তৈরি করছে। আমাদের সুনিদিষ্ট করারোপের পাশাপাশি এর ওপর প্রচলিত স্তর প্রথা বাতিল করতে হবে। তামাকের ওপর সঠিকভাবে উচ্চ হারের কর বৃদ্ধি করা হলে রাজস্ব আয় বাড়বে এবং এর বিপরীতে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমবে।
এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্বে রুমানা হক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগ ও বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, তামাকখাত থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব আয় প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা বাবদ ৩০ হাজার কোটি টাকার অধিক ব্যয় হয়।
শারমিন রিনভী বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় আমাদের তামাক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপগুলোর পাশাপাশি পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আমাদেরকেও তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের কথা বললেই রাজস্ব আয়, সিগারেটের চোরাচালান, কর্মসংস্থানসহ নানা ধরনের বিভ্রান্তকর তথ্য প্রদান করা হয়। অথচ তামাক থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব থেকে অধিক অর্থ ব্যয় হয় তামাকজনিত কারনে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসায়। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে সিগারেটের দাম কম। ফলে প্রমানিত হয় যে, সিগারেটের চোরাচালান মূলত কোম্পানির ভ্রান্ত প্রচারণা। এ ধরনের প্রচারণার মাধ্যমে কোম্পানীগুলো তামাকের উপর কর বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্থ করে। তামাকের বৃহৎ বাজার থাকলেও স্বল্প পরিমাণ মানুষ তামাকের বিপনন, উৎপাদন ও চাষের সাথে জড়িত। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে তামাকের উপর নির্ভরশীলতা ধীরে ধীরে কমিয়ে নেয়া সম্ভব। তিনি তামাক কোম্পানিগুলোর বিভ্রান্তকর তথ্য প্রচার রোধে গণমাধ্যমগুলোকে আরো সর্তক হওয়ার অনুরোধ করেন।
এসময় তরুণ প্রজন্মকে লক্ষ্য করে তামাক কোম্পানিগুলো আগ্রাসী প্রচারণা চালাচ্ছে বলেও আলোচনায় মত দেন বক্তারা। দেশে প্রতিবছর ২ শতাংশ হারে বাড়ছে সিগারেটের উৎপাদন। এতে করে লাভবান হচ্ছে কোম্পানীগুলো। বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম তামাকের বাজার বলেই সম্প্রতি দেশে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছে একটি বিদেশি তামাকজাত কোম্পানি। প্রকৃতপক্ষে তামাক ব্যবহার, উৎপাদন, চাষ সকলক্ষেত্রে সাধারণ মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তামাক চাষ এলাকাগুলো দেশে সবচেয়ে বেশি দরিদ্রপীড়িত। বাংলাদেশে বিক্রিত মোট সিগারেটের ৯৪ ভাগ খোলা বিক্রি হয়। তরুণদের তামাক থেকে দূরে রাখতে কর বৃদ্ধি, আইনের সংশোধনসহ খোলা সিগারেট বিক্রি বন্ধ করা প্রয়োজন।
বক্তারা বলেন, রাজস্ব আদায় থেকে আমাদের জনস্বাস্থ্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তামাক নিয়ন্ত্রণে এর ওপর কর বৃদ্ধি অন্যতম কার্যকর উপায়। স্বাস্থ্যহানিকর তামাকের ওপর কর বৃদ্ধি করে তা জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে হবে।