corona-lock

আসিফ ইব্রাহিম, নিহাদ কবির, আবুল কাসেম খান, সৈয়দ নাসিম মনজুর, ড. এম মাসরুর রিয়াজ:

বর্তমান বিশ্বায়িত পৃথিবীতে এক অদৃষ্টপূর্ব পরিস্থিতিতে লাখ লাখ মানুষের মনে এ প্রশ্ন আবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু কোভিড-১৯-এর কালে এ দুটো কি পারস্পরিকভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, নাকি স্বাস্থ্য সুরক্ষা যথাসম্ভব নিশ্চিত করে জীবিকার চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করা সম্ভব?

সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ এবং তাতে মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

বিশ্বজুড়ে বহু অর্থনীতি যখন করোনার চাপ সামলাতে ব্যতিব্যস্ত, তখন কবে, কখন, কীভাবে দেশগুলো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরম্ভ করবে, তা নিয়ে প্রচুর বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

যেখানে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষই হয় সম্পূর্ণ গৃহবন্দি অথবা চলাচলে কিছুটা সীমাবদ্ধ এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কার্যত স্থগিতই বলতে হয়, সেখানে লাখ লাখ মানুষের জীবিকার প্রয়োজনে তা সচল করার ব্যাপারটা প্রশ্নাতীতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

কিছু সাদৃশ্য থাকলেও বিভিন্ন দেশের চিন্তাধারা এ নিয়ে স্বভাবতই বিভিন্নরকমের, কারণ অর্থনীতির পুনঃসচলায়ন নির্ভর করবে প্রতিটি দেশে করোনার সংক্রমণের অবস্থার ওপর। সমস্যার ব্যাপ্তি যেহেতু একেক দেশ বা অঞ্চলে একেকরকমের, তাই প্রতিটি সরকারের প্রতিক্রিয়াও একেকরকমের।

ইউরোপের যে দেশগুলোয় সংক্রমণের চাপ কমে গেছে (curve has flattened) এবং নতুন আক্রান্ত রোগী বা মৃত্যুর সংখ্যা কমে গেছে যেমন- স্পেন, ইতালি ও জার্মানি, সেসব দেশে সরকার সীমিত পরিসরে ব্যবসা খুলে দেয়া এবং কিছু ক্ষেত্রে জনজীবন স্বাভাবিকীকরণের দিকে গেছে।

অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে যদিও নতুন রোগাক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যা কমছে, তবুও তারা প্রচুর সাবধানতা অবলম্বনপূর্বক লকডাউন বজায় রেখেছে।

অনেকের কাছেই যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্তটা যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়েছে। সংক্রমণের ঝুঁকি সত্যিকার অর্থে কমে যাওয়ার আগে বা ভাইরাসটির সম্ভাব্য প্রসার ও নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ হাতে আসার আগেই হুট করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরো দেশে শুরু করে দিলে আবার ভাইরাসটির পুনঃসমাগম এবং সংক্রমণ সম্ভাব্য মারাত্মক পরিণামের ঝুঁকি বহন করে।

সিঙ্গাপুরের মতো দেশের উদাহরণ থেকে দেখা যায় যে, প্রথমে তারা ভালো ফলাফলের ভিত্তিতে লকডাউনেও যায়নি; কিন্তু হঠাৎ করেই মার্চের চতুর্থ সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের হার প্রায় পঞ্চাশগুণ বেড়ে যাওয়ায় এখন তারা দেরিতে হলেও কঠোর লকডাউনে চলে গেছে।

সন্দেহ নেই, এ ধরনের ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ বরদাশত করা কঠিন; কিন্তু বিজ্ঞান এবং বিচক্ষণতা- দুটোই বলে যে, যথাসময়ের আগেই এগুলো সরিয়ে নেয়াটা বিপজ্জনক।

অন্তত একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা না করে তো কখনই নয়, যাতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় নিরাপদে শুরুর জন্য গণস্বাস্থ্যবিষয়ক বিজ্ঞান ও তথ্য, ক্রান্তিকালীন ব্যবস্থাপনা এবং সুনির্দিষ্ট কাঠামো ও নিরাপত্তা বিধিসম্মত সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট : বাংলাদেশে চার সপ্তাহের বেশি সময় ধরে একধরনের আংশিক লকডাউন থাকার কারণে জিডিপি প্রতিদিন প্রায় ৩৩০০ কোটি টাকার ধাক্কা খাচ্ছে, সেই সঙ্গে প্রায় এক কোটি প্রান্তিক পরিবার তাদের দৈনিক আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যার ওপর তারা নির্ভরশীল।

প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সংগঠন যেমন- তৈরি পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের প্রতিনিধিরা নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে কারখানা খোলার অনুমতি নিতে সক্ষম হয়েছেন। সরকার, জীবন ও জীবিকার তুলনামূলক পরিমাপের কঠিন পরিস্থিতিতে সীমিতভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরায় চালু করার দুরূহ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে; তবে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, সিদ্ধান্তটি হয়তো বা যথাযথ সময়ের একটু আগেই এবং যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়াই চলে এসেছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ওষুধ শিল্প এবং রফতানি খাত ২৬ এপ্রিল থেকে কোভিড সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিতভাবে কারখানা চালাতে পারছে, যদিও প্রথম থেকেই এ ধরনের একটা সুযোগ তাদের দেয়া হয়েছিল। ব্যাংকিং সেবা আগে সীমিত পরিসরে চলছিল, সেটার পরিসর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে এবং পণ্য পরিবহন সেবাও খুলে দেয়া হয়েছে।

তবে যেহেতু বেশ কিছু খাতে ‘সীমিত’ শব্দটার দিকে নজর না দিয়ে অনেক কলকারখানা পুরোদমে চালু হয়ে গেছে, সেগুলোর সঙ্গে আনুষঙ্গিক সেবা যেমন- আহার-বাসস্থান, সেগুলোও চালু হয়ে গেছে।

ইফতারি বেচাকেনাও ‘সীমিত পরিসরে’ চালু করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। চিন্তার কারণ এটাই যে, ‘সীমিত’ শব্দটার কার্যকারিতা কতটুকু থাকবে- মান্যের চেয়ে অমান্যই বেশি হবে হয়তো।

অন্যান্য দেশের প্রতিক্রিয়া : সন্দেহ নেই যে, উন্নত দেশই হোক বা উন্নয়নশীল অর্থনীতি, কোনো দেশই একটি অজানা, অনির্দিষ্টকালের জন্য সম্পূর্ণ লকডাউনে থাকতে পারবে না। আবার কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত এবং সহজলব্ধ না হওয়া পর্যন্ত আগের অবস্থায়ও ফিরে যাওয়া যাবে না, কাজেই ধীরে ধীরে যতটা সম্ভব স্বাভাবিকীকরণের দিকে এগোতে হবে।

কিন্তু এটাও লক্ষ রাখতে হবে যে, যেসব দেশে বা অঞ্চলে এখনও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ভাইরাস সংক্রমণ বিদ্যমান, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরায় চালু হলে, সেই সংক্রমণ বাড়বে।

তাই যে দেশগুলো পুনরায় কাজ এবং ব্যবসা আরম্ভ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা বিজ্ঞান ও তথ্যভিত্তিক সুনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতির মাধ্যমে, ব্যবসা বা শিল্প খাতের, ভৌগোলিক এবং সংশ্লিষ্ট জনসমষ্টির ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে তা করছে।

তারা সুনির্দিষ্ট, পদ্ধতিগত লকডাউন এক্সিট স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করছে- যেখানে কম ঝুঁকিপূর্ণ অথচ জরুরি খাতগুলো দিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ক্রমান্বয়ে খুলে দেয়ার রূপরেখা বিবৃত রয়েছে। এই স্ট্র্যাটেজিগুলো আবার প্রয়োজনে নবলব্ধ তথ্যের আলোকে দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং স্থানীয় পর্যায়েও ব্যবহারযোগ্য।

যে দেশগুলো এখন পরিষ্কারভাবে সময়-নির্দিষ্ট এক্সিট প্ল্যান বা নির্গমন পরিকল্পনা বিবৃত করেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে মারাত্মকভাবে কোভিড-১৯ বিধ্বস্ত দেশ যেমন- যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন এবং ইতালি। আবার সে রকম দেশও রয়েছে যারা কোভিড-১৯-কে বেশ ভালোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করেছে।

যেমন- অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং চেক প্রজাতন্ত্র। ভারত ২০ এপ্রিল থেকে একটা পরিকল্পনা করেছিল জীবিকা নির্বাহের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় খাত, যেমন- কৃষি, ওষুধ শিল্প, প্যাকেজিং, রফতানি, ই-কমার্স, কনস্ট্রাকশন ইত্যাদি খুলে দেয়ার; কিন্তু প্রয়োজনের কারণে লকডাউন আরও দু’সপ্তাহ বাড়িয়ে দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া দেখিয়েছে কীভাবে শক্ত মধ্যাবর্তন (intervention) এবং কার্যকর পরিকল্পনার মাধ্যমে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যায়।

কার্যকর, সুনির্দিষ্ট এক্সিট পলিসি তৈরি : উপরিউক্ত দেশগুলোর এক্সিট পলিসিগুলোর একটা লক্ষণীয় দিক হল- প্রত্যেকটিই বিজ্ঞান ও তথ্যনির্ভর, সুনির্দিষ্ট কাঠামোভিত্তিক এবং পর্যায়ক্রমিক।

যে কোনো দেশের কর্মকাণ্ড পুনরায় আরম্ভ করার প্রস্তুতি নির্ভর করবে সে দেশের স্বাস্থ্য খাতের প্রস্তুতি এবং সংক্রমণের তীব্রতার ওপর। কার্যকর এক্সিট পলিসি নিম্নের বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করবে-

কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার বর্ধিত সক্ষমতা : বিস্তৃত পরিসরে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করা, যাতে সংক্রমণের জ্ঞাত সোর্সের সব কন্ট্যাক্ট শনাক্ত করে আইসোলেট করা যায়; নিয়মিত সংক্রমণ ও মৃত্যুহার সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান ও বিতরণ করা; স্থানীয়ভাবে ক্ষমতায়ন এবং সামর্থ্য বৃদ্ধি করা, যাতে প্রয়োজনে কোনো হটস্পট তৈরি হলে সেখানে সঙ্গে সঙ্গে লকডাউন করে দেয়া যায়।

অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা থেকে ভালো উদাহরণগুলো বিবেচনা করে সরকারের উচিত হবে এমন একটা পরিকল্পনা করা- যাতে সব দিক বিবেচনা করে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং নিরোধ করা যায়, একই সঙ্গে কার্যকরভাবে লকডাউন তুলে নেয়া যায়।

পরিকল্পনা ও সমাধানগুলো এ বিষয়ে নির্দেশ দেবে যে-

১. পর্যায়ক্রমে খুলে দেয়ার আগে কোনো খাত বা এলাকাকে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাভিত্তিক কোন কোন শর্তাবলি পূরণ করতে হবে সে মানদণ্ড নির্ধারণ করা।

২. দেশব্যাপী ভাইরাসের সম্ভাব্য পুনঃআক্রমণসহ স্থানীয়ভাবে প্রশাসনকে কোন কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে হবে, তা ঠিক করা।

৩. নীতিমালা : ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের মালিক, সরকারি প্রতিষ্ঠান- খোলার সময়, বিশেষ করে স্থানীয়ভাবে এবং পরবর্তী পর্যায়ে সবার নির্দিষ্ট দায়িত্ব কী হবে, সে সংক্রান্ত নীতিমালা ঠিক করা।

বর্তমানে নিঃসন্দেহে এই পরিস্থিতি একেবারেই অভূতপূর্ব এবং কোনো দেশই এর থেকে উত্তরণের উপায় বা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ, নিয়ন্ত্রণ বা রোগ নিরাময়ের কোনো অব্যর্থ উপায় বের করতে পারেনি। তারপরও লকডাউন এক্সিট স্ট্র্যাটেজি তৈরি করার সময় কয়েকটি বিষয়ে বাংলাদেশকে লক্ষ রাখতে হবে। যেমন-

১. স্থানীয় ভৌগোলিক অবস্থানকৃত ঝুঁকি মোকাবেলা।

২. দেশের এবং স্থানীয় প্রশাসনের সক্ষমতা বিবেচনায় সময়কালভিত্তিক পর্যায়ক্রমিক পদক্ষেপ নেয়া।

৩. সমাজ এবং অর্থনীতির প্রতিটি অংশের বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই ও তদনুসারে পরিকল্পনা করা এবং

৪. সমাজের দুর্বল অংশের ওপর সুনির্দিষ্ট প্রভাব বা অভিঘাত বিবেচনায় রাখা।

সর্বোপরি পরিকল্পনাটি বাস্তবসম্মত এবং খাতভিত্তিক হতে হবে, যাতে করে স্পষ্ট অভিপ্রায় ও লক্ষ্যগুলো পূরণ করা যায়। যেমন- শ্রমিক ও ঝুঁকিপূর্ণ সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা, কার্যকরভাবে পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও নিরীক্ষার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা, জীবিকার ব্যবস্থা করা, চলাচল বা যাতায়াত ব্যবস্থা চালু করা এবং আরেকটু সময় নিয়ে সমগ্র অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন বা পূর্বাবস্থায় বা আরও ভালো অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।

এসবই করা যাবে যথা প্রয়োজনে উপযুক্ত বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ করে। যেমন- জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায়, চিকিৎসা-ব্যবস্থাপনায়, সামাজিক আচরণ বিজ্ঞানে এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে। কার্যকর সমন্বয় এক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে (যদিও এটা আমাদের দেশে প্রায়ই দেখা যায় না) এবং একটি প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় প্রক্রিয়া সন্নিবেশ করলে তা উল্লেখযোগ্যভাবে আমাদের প্রয়াসকে ঋদ্ধ করবে।

সব অংশীজনকে একসঙ্গে নিয়ে এ রকম প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ (যার নেতৃত্বে থাকতে পারেন একজন উচ্চপর্যায়ের দক্ষ ও ক্ষমতায়িত নীতিনির্ধারক) সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নিয়মিত পরিবীক্ষণে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারবে।

কোভিড-১৯-এর কারণে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এবং ব্যবহারে অনেক পরিবর্তন আসবে, যা আরও বহু দিন চলবে এবং ঘরে-বাইরে সাধারণ ও বিশেষ স্বাস্থ্যবিধি নির্ধারণ ও পালন করতে হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন খাতের জন্য বিশেষায়িত নিরাপত্তা প্রটোকল তৈরি করতে ও মানতে হবে। এগুলো দৈনন্দিন ব্যবহারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

আগে যুদ্ধ জয়, তারপর বিজয়োৎসব : যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী এ সপ্তাহে কাজে ফিরে বলেছেন, ‘শত্রুকে কুস্তি করে মাটিতে ফেলে দেয়া শুরু করেই ছেড়ে দিও না।’

বাংলাদেশ যেন এখনই সাবধানতা থেকে সরে না আসে, অর্থনীতি পুরোপুরি খুলে দেয়ার সঠিক সময়টি নির্ধারণ করার জন্য তথ্য-উপাত্তের ব্যবহার করে সময়োচিত সিদ্ধান্তটি নেয়। পদ্ধতিভিত্তিক, বিজ্ঞান ও তথ্যভিত্তিক, পর্যায়ক্রমিক পথে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করাটাই বাঞ্ছনীয়।

প্রথমদিকে প্রাজ্ঞ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে সংক্রমণের ব্যাপকতা এড়াতে পারার সুফল যেন দ্রুত অপরিকল্পিত কোনো পদক্ষেপের কারণে আমরা হারিয়ে না ফেলি। এতে দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়তে পারে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে লকডাউন করতে হলে সমাজের দীর্ঘমেয়াদি প্রভূত ক্ষতিসাধন হতে পারে। নিয়ন্ত্রণ এমনভাবে যথাসময়ে শিথিল করতে হবে যাতে সবচেয়ে কম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক লাভ পাওয়া যায়।

আমরা মনে করি, জীবন ও জীবিকা ‘এটি নয়তো ওটি’ সিদ্ধান্তের ব্যাপার নয়। বাস্তবসম্মত, সাহসী কিন্তু সাবধানতামূলক নীতির মাধ্যমে উভয়ই রক্ষা করা সম্ভব। আমাদের তুলনামূলকভাবে কম সংক্রমণ ও মৃত্যুসংখ্যা রয়েছে; আমরা এর অস্বাভাবিক কোনো বৃদ্ধি দেখতে চাই না।

আমাদের নীতিনির্ধারকরা অন্য সেসব দেশের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিতে পারেন, যারা রোগের বিস্তারের ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে কয়েক সপ্তাহ এগিয়ে আছে এবং জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে পারেন, যারা আমাদের দেশের বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় যথোপযুক্ত পরামর্শ দিতে পারেন। এতে আমরা স্বল্পতম সময়ে টেকসই, নিরাপদ এক্সিট এবং রিকভারির পথ খুঁজে নিতে পারি।

আসিফ ইব্রাহিম : চেয়ারম্যন, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ; নিহাদ কবির : প্রেসিডেন্ট, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকা; আবুল কাসেম খান : চেয়ারম্যান, বিল্ড; সৈয়দ নাসিম মনজুর : ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড; ড. এম মাসরুর রিয়াজ : চেয়ারম্যান, পলিসি এক্সচেঞ্জ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *