বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বিনিয়োগের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এ পরিকল্পনার কথা জানান।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বিনিয়োগের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এ পরিকল্পনার কথা জানান।

অনুষ্ঠানে বিডার পক্ষ থেকে আগামী ৭-১০ এপ্রিল বিনিয়োগ সম্মেলন করার ঘোষণা দেওয়া হয়। সম্মেলনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন ইকোনমিক জোনগুলো পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।

বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের সঠিক IPA নির্ধারণ করতেও অনেক সময় লাগে— যা নতুন ব্যবস্থায় সহজতর হবে বলে জানান তিনি।

বিনিয়োগ প্রমোশনের জন্য বর্তমানে বিডার পাশাপাশি বাংলাদেশ ইকোনকিমক জোন অথোরিটি (বেজা), বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (বেপজা), হাইটেক পার্ক অথোরিটি, বিসিকসহ কয়েকটি সংস্থা রয়েছে। ব্যবসার অনুমোদনসহ নানান বিষয়ে রেজিস্ট্রেশনে  এসব দপ্তরে যেতে হয় উদ্যোক্তাদের।

বিডা চেয়ারম্যান আরও বলেন, “বর্তমানে বেসরকারি খাতে সরকারের ভূমিকা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। অন্যান্য দেশে দেখা যায়, সরকার সাধারণত এমন খাতে বিনিয়োগ করে, যেগুলো জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে জড়িত। তবে বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে সরকারের সরাসরি বিনিয়োগ রয়েছে— যা অনেক ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয়।”

তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, এসব খাত থেকে সরকারের ধীরে ধীরে সরে আসা উচিত। আগামী ৬ মাসের মধ্যে বিভিন্ন খাত থেকে সরকার সরে আসার উদ্যোগ নেবে। ব্যবসা করা বেসরকারি খাতের দায়িত্ব, আর সরকার ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করে দেবে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “সরকারের অব্যবহৃত সম্পদ, যেমন— পাটকলগুলো, যেখানে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সুবিধা থাকলেও বছরের পর বছর অকার্যকর রয়েছে। আমরা এগুলো পুনঃশিল্পায়নের পরিকল্পনা করছি।”

বিডা’র একটি প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইসরি বোর্ড গঠনের পরিকল্পনাও রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বেসরকারি খাতের পরামর্শ ছাড়াই অনেক সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়– যা পরে সঠিক সিদ্ধান্ত হিসেবে প্রমাণিত হয় না। তাই বিভিন্ন শিল্পখাতের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি পরামর্শক কাউন্সিল গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। এটি আমাদের নেওয়া ২১টি উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম।”

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা। এতে বক্তব্য দেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, প্রশাসক হাফিজুর রহমান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান এবং লাফার্স হোলসিম বাংলাদেশের সিইও মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ গ্যাস সরবরাহে সিস্টেম লসের নামে ১০ শতাংশ চুরি বন্ধের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, “এই চুরি বন্ধ করা গেলে নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না। গ্যাস ও ভ্যাট বৃদ্ধির আগে অর্থনীতি ও জনজীবনে এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। এছাড়া, বিনিয়োগকারীদের ৪০ শতাংশের মতো ব্যয় অনিয়মের কারণে বেড়ে যায়।”

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, “নীতির ধারাবাহিকতার অভাব বিনিয়োগ বৃদ্ধির বড় প্রতিবন্ধকতা। দুর্নীতির কারণে খাতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটি ভেঙে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি করতে হবে।”

লাফার্স হোলসিম বাংলাদেশের সিইও মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, “দেশের অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ না করেই বিদেশি বিনিয়োগ আনতে রোড শো করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্যোগ প্রয়োজন।”

এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, “ট্যাক্স হেভেন না হলেও বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছু সুবিধা দেওয়া উচিত। নীতির বারবার পরিবর্তন বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা তৈরি করে।”

সেমিনারে বিডার হেড অব বিজিনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান রচি ‘এফডিআই হিটম্যাপ’ শিরোনামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, ২০টি প্রতিষ্ঠানের মতামতের ভিত্তিতে ১৯টি অগ্রাধিকার খাত নির্ধারণ করা হয়েছে। এই হিটম্যাপের মাধ্যমে বিনিয়োগ বাড়াতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কেন্দ্রীয় বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থা গঠন করবে বিডা

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *