স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রফতানি প্রতিযোগিতার সক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে অনেক দেশের সঙ্গেই এফটিএ বা পিটিএ’র মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হবে। এ কারণে সরকারের রাজস্ব আহরণে নেতিবাচক প্রভাব আসতে পারে। এক্ষেত্রে হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের শুল্ক আদায় তথা রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার ধাক্কা মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করার দরকার বলে মনে করে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম-ইআরএফ’র নেতারা।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উদ্যোগে আয়োজিত প্রাক বাজেট আলোচনায় ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম- ইআরএফের নেতারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
ইআরএফ জানিয়েছে, সংগঠনের পক্ষ থেকে আগামী অর্থবছরের জন্য যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে—
১. আয়কর রিটার্ন দাখিল না করা টিআইএনধারীকে কর নেটের আওতায় আনতে আইনের বাধ্যবাধতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতনা করা দরকার।
২. সিটি করপোরেশন এলাকার নাগরিকদের সর্বনিম্ন কর ৫ হাজার টাকা। করের এ পরিমাণটি কমিয়ে সব টিআইএনধারীকে কর প্রদানে উৎসাহী করা।
৩. করযোগ্য নাগরিকদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করে দেশে করযোগ্য প্রকৃত নাগরিকের সংখ্যা নিরূপণে এনবিআরের একটি জরিপ চালানো জরুরি। একইসঙ্গে তাদেরকে করের আওতায় আনতে সারাদেশের উপজেলা পর্যায়ে এনবিআরের কার্যক্রম বাড়ানো দরকার।
৪. দেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের করের আওতায় আনতে এনবিআারের উদ্যোগ জোরালো করা প্রয়োজন।
৫. ব্যবসার মূলধন আটকিয়ে না রেখে অন্য কোনও বিকল্প পদ্ধতিতে কর আহরণ করা যায় কিনা, তা ভাবতে হবে। একইসঙ্গে কোনও ব্যবসায়ী যেন কর ফাঁকি দিতে না পারেন, সেজন্য এনবিআরের অটোমেশন ও কঠোর মনিটরিং দরকার।
৬. অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল পদ্ধতিকে আরও জনপ্রিয় করতে ব্যাপকভিত্তিক প্রচারণা চালানো দরকার।
৭. জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েব সাইটটি আপগ্রেড করা। এনবিআরের গবেষণা সেলটি আরও কার্যকর ও যুগোপযোগী করার প্রয়োজন।
৮. মুদ্রাপাচার রোধে ভারত অথবা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কঠোর আইন করা যায় কিনা, সেটা ভেবে দেখা প্রয়োজন।
৯. বিনিয়োগকারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কর কাঠামো প্রণয়ন করা যেতে পারে।
১০. আয়কর আইনটি আধুনিক এবং সহজবোধ্য করে আইনটি বাস্তবায়নের আগে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বসে তাদের মতামতের ভিত্তিতে এটি চূড়ান্ত করা।
১১. কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পুনর্গঠন জরুরি। এক্ষেত্রে ডাইরেক্ট ট্যাক্স এবং ইনডাইরেক্ট ট্যাক্স নামে দু’টি বিভাগ গঠন করা যেতে পারে।
১২.বন্ডেড ওয়্যারহাউজ ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে এনবিআর আইনি কাঠামোয় পরিবর্তনসহ এ খাতে অনিয়ম রোধ এবং আরও রফতানিবান্ধব বন্ড ব্যবস্থাপনা তৈরির জন্য এনবিআরের নেওয়া বন্ডেড ওয়্যারহাউজ অটোমেশন প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করে পুরো প্রক্রিয়াকে অটোমেশনের আওতায় আনা দরকার।
১৩. স্থানীয় শিল্পের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কী কী সুবিধা দেওয়া উচিত, তা নির্ধারণ করে ট্যারিফ পলিসি দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি।
১৪. রফতানির ক্ষেত্রে অন্য সম্ভাবনাময় খাত যেন তৈরি পোশাক শিল্পের মতো নিয়মিত বন্ডেড সুবিধা পায়, সেটি নিশ্চিত করা।
১৫. প্রতিটি পণ্যের জন্যই আলাদা এইচ এইচ কোড নির্ধারণ করা।
১৬. ব্যবসায় পরিবেশ সহজ করা এবং এনবিআরের কার্যক্রমকে অটোমেশন করতে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডোর কাজটি নির্ধারিত সময়েই শেষ করা।
১৭. ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভ্যাটের আওতায় আনা, পাশাপাশি খুচরা ব্যবসায়ীদের ভ্যাট, পণ্য মূল্যের ওপর নির্ধারণ না করে সংযোজিত মূল্যের ওপর নির্ধারণ করা দরকার।
১৮. ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে ইএফডির ব্যবহার নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া।
১৯. পরিবেশবান্ধব বা সবুজ শিল্পায়নে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে এনবিআর সাধারণ কারখানা ও পরিবেশবান্ধব শিল্পের মধ্যে করপোরেট করের ব্যবধান কমপক্ষে ৫ শতাংশ রাখা। পরিবেশবান্ধব কারখানায় অতিরিক্ত বিনিয়োগের তুলনায় বিদ্যমান ২ শতাংশ কর সুবিধা অপ্রতুল, এটি বাড়ানো যেতে পারে।
২০. বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে বোতলজাত পানির ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক শিথিল করা। জেলা শহরের বাইরে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে উৎসাহ প্রদানে ওই বিনিয়োগকে করমুক্ত সুবিধা দেওয়া। ডিজিটাল অর্থনীতির যেহেতু দ্রুত বিকাশ ঘটছে, তাই এই খাতকে করের আওতায় আনা।