অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ
মনে হয় এই তো সেদিন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলাম। অসংখ্য ভালো ছাত্রের আশেপাশে আমার অবস্থান। ডানে তাকাই ঢাকা বোর্ডে প্রথম, বায়ে তাকাই কুমিল্লা বোর্ডের, সামনে রাজশাহী, পেছনে বরিশাল। কী অসাধারণ একটি পরিবেশ! আজ যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করছে তাদের ভাগ্য এত সুপ্রসন্ন নয়, যদিও তারা ডানে-বায়ে জিপিএ ৫ ধারী ছাত্র দেখতে পাবে। বোর্ডের সর্বোচ্চ গ্রেড, কিন্তু লক্ষাধিক ছাত্র যখন তা পায় তখন আর মানের উৎকর্ষ সম্পর্কে উচ্চকণ্ঠ হওয়া যায় না।
এর মধ্যেই অবসরের সময় হয়ে এলো। পেছনে ফিরে তাকালে মনে হয় অনেক কিছু করার ছিল, সময়কে যথাযথভাবে ব্যবহার করি নি। কিন্তু সময় তো চলছে—আমি কিংবা আমরা কাজ করি বা না করি। পেছনে গিয়ে শুধরে আসারও সুযোগ নেই। বহুদিন মনে হয়েছে সময়কে আরো কার্যকরভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন। রাজধানীর যানজটের কাছে সময়কে নিজেকে সঁপে দিয়েছি, খুবই অনুৎপাদনশীলভাবে সময় নষ্ট করেছি। এ মাসেই (মে ২০২০) পি.আর.এল শেষ হয়ে যাবে। বুয়েট ক্যাম্পাস সবমিলিয়ে খুবই সুন্দর। ভৌত অবকাঠামো কিংবা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শ্রেষ্ঠত্বের কথাই বলছি না শুধু। আমার বিভাগের শিক্ষক, ছাত্র—তাদের থেকেও অনেক শেখার সুযোগ ছিল। তাদের মেধা, মানবিক গুণাবলি সবই রীতিমতো অনুকরণীয়। বাসস্থানও অসাধারণ, ঢাকা শহরের ভেতরে এমন সুন্দর পরিবেশ আর নেই।
ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নিতে হবে। অনেকেই এর মায়া ত্যাগ করতে পারেন না, স্বাভাবিক সময়ের অতিরিক্ত কাটান। আমি ভাবলাম ভিন্নভাবে। আমি বাসা ছাড়লেই আমার কোনো এক তরুণ সহকর্মী ক্যাম্পাসে আসতে পারবে। আমারও এমন একটি সময় ছিল যখন ভাড়া বাসায় থেকে দুই ছেলেকে স্কুলে আনা নেয়া হতো, রীতিমতো গলদঘর্ম অবস্থা। সিদ্ধান্ত নিলাম—আমাকে নিয়ে যাতে আমার কোনো তরুণ সহকর্মীকে এমনটি ভাবতে না হয়।
আমি আমার এক স্নাতকের গুণমুগ্ধ—নাম তার সজল (আজমত ইকবাল, সিইও, রিভ সিস্টেমস)। তাকে বাসার কথা বলতে সে তার ক্যাম্পাসের কথা বলল—পূর্বাচলের ডুমনিতে অবস্থিত পিংক সিটি। আমাদের দেখাতেও নিয়ে গেল। আমাদের পছন্দ হয়ে গেল এবং সময়ের আগেই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিয় ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে এলাম। আসতে হতোই—একমাস আগে কিংবা পরে। গাছ যেমন খুব যত্নে কচি পাতাকে ধরে রাখে, তার বর্ধনে সাহায্য করে; ঠিক একই গাছ থেকে বৃদ্ধ জরাজীর্ণ পাতা ঝরে পড়লে সে বেঁচে যায়—অনেকটা এরকম অনুভূতি হচ্ছিল। আসলে এটাই নিয়তি। তাই মেনে নিতে হবে। সুতরাং এখন আমি নতুন ক্যাম্পাসের বাসিন্দা।
আমি কিছুটা অপরিণামদর্শী মানুষ হলেও আমার পরামর্শদাতা সজল মোটেই তা নয়। আমি এখন আর প্রতিদিন আমার প্রিয় সহকর্মীদের দেখতে পারি না, যখন তখন তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারি না। যেখানে এসেছি, পরিচিত সজল তো আছেই, বুয়েটের আরো দুয়েকজন স্নাতকের সঙ্গেও কথা হয়েছে। যাতায়াত শুরু হয় নি, তারপরও নতুন জায়গা ভালোই লাগছে। বাসাগুলো সবই দ্বিতল। যদিও বাংলাদেশের অপর্যাপ্ত ভূমি ও অধিক জনসংখ্যার সঙ্গে বেমানান, তবু জীবনযাপন অসাধারণ। এমনকি করোনাকালেও কথাটি সত্য। এ পর্যন্ত জীবনটা কাটিয়েছি মোটামুটি একই রুটিনে—প্রাতঃরাশকে ফাঁকি দিয়ে যথেষ্ট ভোরে অফিসে যাওয়া, তারপর অফিস, মিটিং, রাস্তায় যানজট এগুলো সব উপভোগ করে দিনান্তে ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে বাসায় ফেরা। স্বভাবতই কোনো পড়ালেখা না করেই ঘুম। আবার সকাল—একই দিনপঞ্জি।
এখন জীবনধারায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ভোরে উঠে জানালা দিয়ে তাকালেই সামনে সবজি বাগান। এখানে আসার পর নানা ধরনের সবজির চাষ করছি। আমার শৈশব কেটেছে গ্রামে কিন্তু কখনো কৃষিকাজ করা হয় নি। ২৫ দিনের মধ্যেই খাওয়ার উপযোগী লালশাকের ডাটাও যে কতটা স্বাদের তা এখন বুঝতে পারছি। প্রথম কিছুদিন মহা উদ্যমে আগাছা নির্মূল করতে গিয়ে সবজিই নষ্ট করে ফেলেছি! ডাটা শাক, পুঁইশাক, করলা, বেগুন, ধনেপাতা, লাউ, কুমড়ো, ঢেঁড়স সবই ফলেছে বাগানে। ১৫ মিনিট করে দিনে একাধিকবার সবজি বাগানে কাটাতে মজাই লাগছে।
শুরুতে ভেবেছিলাম করোনার দিনগুলো কাটাব কী করে। টেকনোহ্যাভেনের প্রতিষ্ঠাতা মহা উদ্যোগী হাবিবুল্লাহ করিম সাহেবের খপ্পরে পড়ে গেলাম। Block Chain Olympiad করতে হবে, এই নামের একটি সংগঠনও তৈরি করলেন। International Block Chain Olympiad এর কর্তাব্যক্তি লরেন্স মা (Lawrence Ma) তার বন্ধু, সহপাঠী এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন তার কক্ষসাথী। তিনিও আমাদের উৎসাহিত করতে এলেন। সিদ্ধান্ত হলো, বাংলাদেশ থেকে যারা হংকংয়ে অনুষ্ঠিতব্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে, তাদের জন্যে একটি কর্মশালা আয়োজন করা হবে যেখানে লরেন্স মা, এমআইটি-র প্রফেসর এডেলম্যান এবং আরো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপরিচিত বিশেষজ্ঞবৃন্দ কর্মশালায় অতিথি বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেবেন।
এর মধ্যে করোনার বিড়ম্বনা এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মশালা অনলাইনে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো নিদারুণ অনিশ্চয়তার মধ্যে। কর্মশালায় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী মহোদয়, সদ্যপ্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী এবং অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল সবাইকে অনুপ্রাণিত করলেন। তারপর এর যত কর্মসূচি, অত্যন্ত কর্মপটু জনাব করিম তা সব করে ফেললেন। প্রায় ৫০০ নবীন স্নাতকের অংশগ্রহণে অবশেষে ৬৩টি প্রকল্প জমা পড়ল। বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারের উচ্চপদস্থ ৫৫ জন বিচারক অনেক সময় নিয়ে বিচার করলেন। নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা এবং সবশেষে দলগুলোর সাক্ষাত সবই অনলাইনে করা হলো। এর সবই করোনার অবদান। এর ফলে আমাদের যাতায়াত করতে হলো না, যানজটে সময় নষ্ট করতে হলো না, গাড়ির তেল ফুরোতে হলো না। একেই বলে Blessings in disguise।
বাংলাদেশের মতো সীমিত সম্পদের দেশে যে-কেনো সমস্যাকে সম্ভাবনায় রূপান্তর করতে হবে। আমরা এই অলিম্পিয়াডের প্রায় চূড়ান্ত পর্বে এসে গেছি। প্রযুক্তির এই নতুন ধারার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যে দলগুলো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে, দু-এক দিনের মধ্যেই আমরা তাদের বের করে আনব। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকভাবে এই কর্মসূচিতে সহযোগিতা করার জন্যে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। শুধু এই অলিম্পিয়াডের সভা কিংবা বিচারকার্য পরিচালনার জন্যেই অনলাইন সভা করি নি, এর মধ্যে ছাত্রদের জন্যে সেমিনার এবং পড়াশোনার অনেকগুলো সেশনও অনলাইনের মাধ্যমে করা হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত করোনার ওপর একটি webinar, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আয়োজিত Coronathon—সবই হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে, বাসায় বসে। সুতরাং বলতে গেলে করোনার দিনগুলোতে ব্যক্তিগতভাবে অনেক বেশি উৎপাদনশীলভাবে আমার সময় কাটছে।
এখন বাসায় দোতলায় আমি সকালে আমার কম্পিউটারে বসি, ঠিক যেমন আমি হেঁটে হেঁটে পশ্চিম পলাশীস্থ একাডেমিক ক্যাম্পাসে যেতাম। বসে কিছুটা লেখালেখির কাজও করি, কখনো তা কলাম হোক বা প্রায় বহু বছর ধরে লেখা এলগরিদমের বই-ই হোক। এর মধ্যে রকমারি ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা গুণধর সোহাগের প্রস্তাব—তার ছাত্রদের সে পুরস্কার দিতে চায় আমার ‘মেধাবী মানুষের গল্প’ বইটির মতো একটি বই। এই বইটি প্রায় বছর বিশেক আগে লিখেছিলাম আমাদের দেশের ছাত্রদের উৎসাহিত করার জন্যে। এই আশায় যে, নতুন ছাত্ররা আগ্রহী ও উৎসাহিত হয়ে শিক্ষায় উৎকর্ষ অর্জন করবে। তাতে নিউটনের গল্প যেমন ছিল, ঠিক তেমনি ছিল আমাদের মেধাবী ছাত্রদের গল্পও। সোহাগের প্রস্তাবটাকে এবার আমি একটি সুযোগ হিসেবে নিলাম। বললাম, আমি নতুন করে লিখি। ২০ বছর আগে যাদের নিয়ে ভেবেছিলাম তারা এখন কী করছে, তাদের শ্রেষ্ঠত্বের ধারাবাহিকতা বজায় আছে কিনা তা দেখার ও বিশ্লেষণ করার সুযোগ তৈরি হলো।
আমি দর্শনেন্দ্রিয়ের মাপে দূরদর্শী হলেও মানসিকভাবে যথেষ্ট অদূরদর্শী। আশ্চর্যের বিষয় হলো, যাদের নিয়ে লিখেছিলাম তারা কিন্তু সত্যিই শিক্ষায় তাদের উৎকর্ষ বজায় রেখে চলেছে। করোনা আমাদের মানবিক মূল্যবোধ যেভাবে পরীক্ষা করে গেল, তারপর মনে হলো শুধু মেধাবীদের নিয়ে লেখাটা ঠিক হবে না। কিছু মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ, বিনয়ী মানুষকে নিয়েও লিখতে হবে যাতে করে সমাজ থেকে এই গোষ্ঠী বিলুপ্ত হয়ে না যায়। সে কাজটিও শেষ করেছি। আশা করি মাহমুদুল হাসান সোহাগ বইটি দ্রুতই প্রকাশ করবে।
এর মধ্যে বিভাগের অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষক এবং ২০১৫ সালে ৪১.০৬৩ ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরের সায়েন্স জার্নালে কমপক্ষে তিনটি পেপার প্রকাশ করা ড. বায়েজীদ সুখবর দিল—তার ছাত্র মোস্তফা রাফিদ উদ্দিন কার্নেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়টির ‘কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগ’ বিশ্বে শ্রেষ্ঠ; র্যাংঙ্কিংয়ে ২০ বছর পূর্বে ছিল প্রথম, এখন তৃতীয়। আমাদের আরেকজন মেধাবী ছাত্র সুমন কুমার নাথ প্রায় ২০ বছর পূর্বে সেখানে ভর্তি হয়েছিল। এবার রাফিদ যাচ্ছে। আশা করি অদূর ভবিষ্যতে এই পুনরাবৃত্তির হার বাড়বে। করোনাকালের এই ঘটনাগুলো ‘বিপরীতে হিত’।
সীমিত সম্পদ আর মহা চাহিদার দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু মানবিক গুণাবলিতে আমরা পিছিয়ে নেই। প্রতি বর্গকিলোমিটারে সোয়া তিন জন মানুষের দেশ অস্ট্রেলিয়া করোনার দুর্দিনে বিদেশি ছাত্রদের কালবিলম্ব না করে দেশ ছাড়ার তাগিদ দিচ্ছে। করোনা-উদ্ভূত সংকটকালে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি যথেষ্ট ভালো নয়। মালয়েশিয়া যদিও বিদেশি ছাত্রদের আশ্বস্ত করেছে যে, তাদের খাবার এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা মালয়েশিয়া করবে। মধ্যপ্রাচ্যের মাত্রাতিরিক্ত মাথাপিছু আয়ের দেশগুলোও বিদেশিদের তাড়িয়ে দিচ্ছে তাদের অর্থনীতির দুর্বল অবস্থার কথা বলে। তাই বলে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১১৩০ জন মানুষের বাংলাদেশ কিন্তু ১৫ লক্ষ রোহিঙ্গাকে শারীরিক দূরত্বের কথা বলে তাড়িয়ে দিচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকায় এরকম দুঃসময়ে সুপার মার্কেট লুট হয়ে গেলেও বাংলাদেশের অভাবী মানুষগুলো তা করছে না।
আমরা জানি, এসময় করোনাকে রুখতে আমাদের শারীরিক দূরত্ব বজার রাখতে হবে। সমৃদ্ধিশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরও করোনা আক্রান্তদের জন্যে পর্যাপ্ত হাসপাতালের ব্যবস্থা করতে পারছে না, সেখানে আমাদের অবস্থা চিন্তাই করা যায় না। সুতরাং সরকারি উপদেশ আমরা মেনে চলব। তবে করোনার লকডাউনের সময়ে আমরা আমাদের মস্তিষ্ককে লকডাউন করব না। ছাত্র, শিক্ষক, গবেষক—যারা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ করেন, তাদের জন্যে বাইরের লকডাউন হলো শাপে বর। রাস্তায় যানজটে তাদের সময় নষ্ট হবে না, তারা ক্লান্ত অবসন্ন হবেন না, ঘরে বসে নানারকম উদ্ভাবনী কাজ করে যাবেন। করোনাও জানিয়ে দিল অনেক সমস্যাই আমাদের সমাধান করতে হবে। এরকম দৈব-দুর্যোগেও যাতে আমরা উৎপাদনহীন না হয়ে যাই, সেজন্যে সৃজনশীল পরিকল্পনা চাই। আমাদের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো যাতে বেঁচে থাকার জন্যে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সামগ্রী পায়।
আমরা জানি, করোনার অবসানে কলকারখানাগুলো পূর্ণদ্যোমে চালু না-ও হতে পারে, পোশাক শিল্পের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর চাহিদা হ্রাস পেতে পারে। তখন যাতে মানুষ কাজের অভাবে বেকার না হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে, একজন মানুষ কাজ করতে না পারলেও তাকে খেতে হয়। যেদিন সে বেকার থাকবে দেশের অর্থনীতিতে তার অবদান ঋণাত্মক হবে। আজকের শ্রম আজ দিতে না পারলে আগামীকাল দেয়া যাবে না। সুতরাং সরকারকে উন্নয়নমূলক কাজ বের করতে হবে যাতে তাদের শ্রম তারা দিতে পারে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পড়ালেখা ও দক্ষতা অর্জনের কাজ থেমে থাকা মোটেই গ্রহণযোগ্য হবে না। কীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কার্যকর উপায়ে অনলাইনে জ্ঞান ও দক্ষতা বিতরণ করা যায় তা ভাবতে হবে।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে উদ্ভূত সমস্যাগুলোকে যাতে আমরা সম্ভাবনায় রূপান্তর করতে পারি, যেন আমরা আরো বেশি সৃজনশীল হতে পারি, সেজন্যে অনলাইন অলিম্পিয়াড, হ্যাকাথন, করোনাথন ইত্যাদি উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারি। এই দুঃসময়ে আমাদের মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটুক, মানুষ দুস্থ মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করুক, আমাদের মধ্যে সহমর্মিতা জেগে উঠুক—এটাই কামনা।
লেখক: শিক্ষাবিদ, লেখক ও বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের স্বপ্নদ্রষ্টা