বন্দরে পণ্য পৌঁছানোর তিন দিনের মধ্যে আমদানিকারক কর্র্তৃক বিল অব এন্ট্রিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র শুল্ক কর্র্তৃপক্ষের কাছে জমা না দিলে জরিমানার মুখে পড়বেন আমদানিকারক। এ সংক্রান্ত একটি বিধান কাস্টমস আইনে সংযোজনের উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এটি কার্যকর করা গেলে আমদানি পণ্য বন্দর থেকে ছাড় করার ক্ষেত্রে গতি আসবে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে এক কর্মশালায় এ কথা জানান এনবিআর সদস্য খন্দকার আমিনুর রহমান। ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস : ট্রেডিং অ্যাক্রোস বর্ডারস’ শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করে যৌথভাবে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), এনবিআর ও বিশ্বব্যাংক গ্রুপের অঙ্গ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)।
বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজ করার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের এখনো প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি। ফলে প্রত্যাশিত স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আসছে না বলে মনে করা হচ্ছে। আমদানি-রপ্তানি পণ্যের খালাস প্রক্রিয়া বিশেষত শুল্কায়নে সময় বেশি লাগছে বলে ব্যবসায়ীরা বলে আসছেন। এর ব্যাখ্যায় এনবিআরের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বেশ কিছু কারণ তুলে ধরেন।
ঢাকা আইসিডির কমিশনার মো. আনোয়ার হোসাইন বলেন, সময়মতো বিল অব এন্ট্রি পাওয়া গেলে এক দিনের মধ্যে পণ্যের শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব। তবে শিপিং এজেন্ট, ব্যাংকিং ডকুমেন্ট, বন্দর কর্র্তৃপক্ষের ক্লিয়ারেন্স, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের (আমদানি-রপ্তানিকারকের পক্ষে পণ্য খালাস প্রক্রিয়ায় জড়িত) নানা প্রক্রিয়ার কারণে শুল্কায়নে দেরি হয়। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কর্র্তৃপক্ষের শুল্কহার পছন্দ না হলে, সময়মতো শুল্ককরের টাকা পরিশোধে অনিচ্ছুক হলে কিংবা পছন্দের ডিউটি অফিসারের জন্য অপেক্ষা করে। আবার রাসায়নিক পরীক্ষার জন্যও দেরি হয়। কেবল এককভাবে শুল্ক কর্র্তৃপক্ষ দায়ী নয়।
এ প্রসঙ্গে খন্দকার আমিনুর রহমান বলেন, বন্দরে পণ্য আসার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিল অব এন্ট্রি দাখিল না করলে জরিমানা আরোপের বিধান আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসা করার সূচকে ভারত অনেক এগিয়েছে। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানেরও বড় অগ্রগতি হয়েছে। আমাদের আট ধাপ অগ্রগতি হলেও সন্তুষ্ট নই। টাকা নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বসে আছেন। কিন্তু এসব সূচকের তথ্য বিনিয়োগকারীদের ভাবায়। তিনি বলেন, আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ আর সহজে ব্যবসা করার সূচকে অবস্থান ১৬৮তম। ফলে সন্তুষ্টি খুঁজে লাভ নেই।
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাঁচামালের প্রাপ্যতা ঘোষণার (ইউডি) ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সমিতির হাতে গিয়েছে। কিন্তু ইউডি সংশোধনের কাজ এখন পর্যন্ত অনলাইন করেনি। ফলে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ১৭০ বার পর্যন্ত ইউডি সংশোধন করছে। এতবার কি পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে? অনলাইন না হওয়ায় শুল্ক কর্র্তৃপক্ষ এটি তাৎক্ষণিক দেখতে পারছে না।
আইএফসির প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিস্ট নুসরাত নাহিদ ববি বলেন, অনেক সময় এনবিআরের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হলেও কার্যক্ষেত্রে ফল দিচ্ছে না। উদ্যোক্তাদের ব্যবসার নিবন্ধনের জন্য বিডার কাছে গেলে তারা ভ্যাট কর্র্তৃপক্ষের কাছে পাঠান। আবার ভ্যাট কর্র্তৃপক্ষ বিডার কাছে পাঠান।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার এস এম হুমায়ূন কবীর, ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. মোয়াজ্জেম হোসেন ও ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।