গ্রামীণ ব্যাংককে আবারও ৫ বছরের জন্য কর অব্যাহতি সুবিধা দিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এই কর অব্যাহতির ফলে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের যে কোনো আয়ের ওপর আরোপিত আয়কর, সুপারট্যাক্স বা ব্যবসায়িক মুনাফা করের আওতার বাইরে থাকবে। এর আগে এসআরও’র মাধ্যমে ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। শিগগিরই অর্থমন্ত্রীর কাছে এ সংক্রান্ত সার-সংক্ষেপ পাঠানো হবে বলে এনবিআর সূত্র নিশ্চিত করেছে। গত মঙ্গলবার এনবিআরের বোর্ডসভায় গ্রামীণ ব্যাংকের কর অব্যাহতি দেয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এনবিআরের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বোর্ডসভায় গ্রামীণ ব্যাংকের কর অব্যাহতির বিষয়টি উত্থাপিত হলে সব সদস্যই সম্মতি দেন। কার্যপত্র অনুমোদনের পর অর্থমন্ত্রীর কাছে সার-সংক্ষেপ পাঠানো হবে।
সূত্র মতে, গ্রামীণ ব্যাংক কর অঞ্চল-১৪-এর কর সার্কেল-২৮৭ অধিক্ষেত্রভুক্ত করদাতা। করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ০৭০-২০০-১৮৮৪। ২০১২-১৩ করবর্ষে প্রতিষ্ঠানটির মোট আয় নিরূপণ করা হয়েছে ৩৬৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
বৈঠকে সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর গ্রামীণ ব্যাংকের কর অব্যাহতি সুবিধা শেষ হওয়ার কথা ছিল। সম্প্রতি গ্রামীণ ব্যাংক কর অব্যাহতির মেয়াদ ২০২০ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধির আবেদন করে। তাদের আবেদনটি বিবেচনার জন্য বোর্ড সভায় উত্থাপন করা হলে নতুন করে আরো ৫ বছরের জন্য কর অব্যাহতি দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর।
সম্প্রতি এনবিআরে পাঠানো কর অব্যাহতির আবেদনে গ্রামীণ ব্যাংক উল্লেখ করে, প্রতিষ্ঠানটিকে ধারাবাহিকভাবে কর অব্যাহতির সুবিধা দেয়ায় শেয়ার মালিকদের (সরকার এবং ভূমিহীন সদস্য) লভ্যাংশ দেয়া সম্ভব হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় ২০০৬ সালে ১০০ শতাংশ, ২০০৭ সালে ২০ শতাংশ, ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৩০ শতাংশ দিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়া সম্ভব হবে। সরকার দেশের বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে প্রতিষ্ঠানের অর্জিত আয় লভ্যাংশ হিসেবে গ্রহণ করে ক্ষমতায়নের সুযোগ করে দিয়েছে। সরকারও বিনিয়োজিত অর্থের উপর লভ্যাংশ পাচ্ছে।
সূত্র জানায়, বোর্ডসভায় কার্যপত্র অনুমোদনের পর অর্থমন্ত্রীর কাছে সার-সংক্ষেপ পাঠানো হবে। অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের পর আইনগত ভিত্তি খতিয়ে দেখতে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। আইন মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি পেলে চূড়ান্তভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। যে দিন প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে ওইদিন থেকেই পরবর্তী ৫ বছরের জন্য কর অব্যাহতি সুবিধা পাবে গ্রামীণ ব্যাংক।
জানা গেছে, গ্রামীণ ব্যাংক ২ হাজার ৫৬৮টি শাখার মাধ্যমে দেশের ৮১ হাজার ৩৯০টি গ্রামে প্রায় ৮৬ লাখ ৫৪ হাজার সদস্যের মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করছে। এ কর্মসূচির আওতায় সদস্য পরিবারের লোক সংখ্যা ৫ কোটি বেশি। গ্রামীণ ব্যাংক বছরে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করছে।